স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
করোনা মহামারি সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। করোনার প্রকোপ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার কারণে বেসরকারি ব্যাংকের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে। তবে এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর হালনাগাদ তথ্যে এসব জানা গেছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিধিনিষেধের কারণে অনিরীক্ষিত পরিচালন মুনাফা প্রকাশ করতে পারে না ব্যাংকগুলো। ত
বে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এ ছয় মাসে প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে। তবে পরিচালন মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর যে অংশটুকু থাকে সেটাই প্রকৃত মুনাফা।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৩৬৫ কোটি টাকার মুনাফা করেছে ব্যাংক এশিয়া। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪৬৫ কোটি টাকা।
এবার ৩১৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে এক্সিম ব্যাংক। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৩০ কোটি টাকা। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩০৫ কোটি টাকা, যা গতবছরের প্রথম ছয় মাসে ছিল ৪০০ কোটি টাকা।
এনসিসি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩৬২ কোটি টাকা। এ সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৭৫ কোটি টাকা, যা গতবছরের একই সময়ে ছিল ২৭৮ কোটি টাকা।
যমুনা ব্যাংক গতবছরের প্রথম ছয় মাসে মুনাফা করেছিল ৩১০ কোটি টাকা। এবার ব্যাংকটি মুনাফা করেছে ২৮০ কোটি টাকা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবার মুনাফা করেছে ২৪৩ কোটি টাকা, যা গতবার ছিল ৩৩১ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকের মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯০ কোটি টাকা।
তবে এ সময়ে এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা সামান্য বেড়ে হয়েছে ৯০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৯ কোটি টাকা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের এমডি তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পরিচালন মুনাফা কমে যাওয়ার মূল কারণ ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা। আমরা ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছি, কিন্তু সে অনুপাতে আমানতের সুদ কমাতে পারেনি।
এছাড়া করোনার কারণে গত তিন মাস ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। এ সময় বৈদেশিক বাণিজ্য কেন্দ্রিক ব্যবসাও কমেছে।
এদিকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমলেও বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এবার অগ্রণী ব্যাংক ৫৩১ কোটি টাকার মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩১৯ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৩০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, আমরা আয় বাড়ানোর যতগুলো পথ আছে সবগুলোতেই জোর দিয়েছি। ইন্টারেস্ট, নন-ইন্টারেস্ট, ট্রেজারি কার্যক্রম, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, সিন্ডিকেশন ঋণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স সবগুলোতেই আমাদের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে। এছাড়া বিশেষ ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে আমাদের বড় ধরনের আদায় হয়েছে।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাস মহামারিতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার ক্ষমতা বাড়তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে ১৫ এপ্রিল থেকে।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) ৮৭ শতাংশে আর ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়েছে, যা আগে ছিল যথাক্রমে ৮৫ এবং ৯০ শতাংশ। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ব্যাংকের সব ঋণের সুদহার ১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ কার্যকর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণে ৬ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ব্যাংকের মুনাফা কমেছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/