পর্ব : ১ । ড্রাগন সোয়েটারের তথ্য কারসাজিতে বিভ্রান্তিতে বিনিয়োগকারীরা

dragonমিশুক আমিন :

সদ্য আইপিএ অনুমোদন পাওয়া কোম্পানি ড্রাগন সোয়েটার এন্ড স্পিনিং লিমিটেডের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। দ্রুতগতিতে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি, উৎপাদন ক্ষমতা, মেশিনাদির আর্থিক মূল্য, পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রকাশিত তথ্য মূল্যায়নের পর বিভ্রান্তিতে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজির অভিযোগে তালিকাভুক্তির আগেই কোম্পানিটিকে শাস্তিও ভোগ করতে হয়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ দেখিয়েছে ৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এটাকে কোম্পানি বহির্ভূত আয় হিসাবে দেখানো হয়েছে। অথচ কোম্পানিটির একটি বড় অংকের মধ্য মেয়াদি ঋণকে এহিসাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত ২০১৩ সালে ২৪ ডিসেম্বর সিটি ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানিটিকে ৫৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এ মধ্য মেয়াদি ঋণটি প্রদান করে। কোম্পানিটি এ ঋণের সুদবাবদ প্রতিমাসে ১ কোটি ৬৬ হাজার টাকা ব্যাংকটিকে প্রদান করে আসছে। কোম্পানির ৫৪ কোটি টাকার এই মধ্য মেয়াদি ঋণকে ইক্যুইটি ও লাইবলিটিসে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।

কোম্পানিটি গত ২০১০ সালে মেশিনাদিবাবদ আর্থিক মূল্য ১৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ কোটি টাকা করে। আর্থিক প্রতিবেদনের ২৮ ও ২৯ নম্বর পাতায় কারখানার মেশিনের একটি তালিকা মূল্য সহ দেখানো হয়েছে। সেখানে ২০১০ সালে জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন কোনো মেশিন সংযুক্ত দেখানো হয়নি। এমনকি আগের বছর ২০০৯ সালেও কোনো মেশিন ক্রয় করেছে বলে জানানো হয়নি।

ড্রাগন সোয়েটার এন্ড স্পিনিং লিমিটেডের ২০১৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধন দেখানো হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। সর্বশেষ তিনবছরে ২০১১-১৩ সালে কোম্পানিটি ৬০ কোটি টাকা করেছে এই পরিশোধিত মূলধন। আর্থিক প্রতিবেদনের হিসাবে ২০১৩ সালেই কোম্পাটি তিন পর্যায়ে ( ১১.২৮+ ১৭.৪২+২.৫৭) ৩১.২৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়েছে। আগের বছর ২০১২ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে ১৯.১৪ ও ৯.৪৪ কোটি টাকা এই মূলধন বাড়ায়। এর আগের বছর ২০১০ সালে পরিশোদিত মূলধন ছিল ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ১৯৯৯ সালে এই পরিশোধিত মূলধন ছিল মাত্র ৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটির তিন বছরের ব্যবধানে ৯.৮০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি টাকা বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রন্তি সৃষ্টি করেছে।

ড্রাগন সোয়েটারের উৎপাদন ক্ষমতা শিরোনামে ৯৭ শতাংশ স্বক্ষমতা দেখিয়েছে কোম্পানিটি। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানটির প্রতি বছর উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পিচ। অন্যদিকে প্রতিবছর ২১ লাখ ৬০ হাজার পিচ করে উৎপাদন করে আসছে। এহিসাবে এই কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা আসে ৬৮.৮ শতাংশ। প্রকৃত উৎপাদনের পরিমাণের হিসাবে এই হার আরো কমবে।

কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি সমালোচনায় এসেছে আইপিও প্রক্রিয়ায় খরচের তালিকা। কোম্পানিটি এই খাতে ১.৭৬ কোটি টাকা খরচ করতে চায়। এই তালিকায় ডাটা প্রক্রিয়াবাদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ৬৫ লাখ টাকা দিবে বলে জানানো হয়েছে। বাকি অর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ফি ও অন্যান্য খাতে খরচ করবে। সম্প্রতি আইপিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা আইসিটি লিমিটেড এই খাতে মোট ১.২০ কোটি টাকা খরচ করে। এই কোম্পানিটির আইপিও আবদেন পড়ে প্রায় ৭২ গুন।

কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ নিয়ে আলোচনায় আসছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ-রক্ষার্থে নিয়োজিত কোনো স্বাধীন পরিচালক নেই ড্রাগন সোয়েটার এন্ড স্পিনিং লিমিটেডের। কোম্পানিটি গত ২০১১ সালে ২০০ শতাংশ বোনাস আর ২০১২ সালে ৩৯.৩০ শতাংশ বোনাস দেয়। অন্য কোনো বছরেই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি তারা।

কোম্পানিটির চতুরতা নিয়ে অবগত রয়েছে ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তালিকাভুক্তির আগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটিকে আর্থিক দন্ড দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। শাস্তি দেওয়া হয় তৎকালিন ইস্যু ম্যানেজার ফার্ষ্ট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডকে। দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে স্বদেশ ইনভেষ্ট লিমিটেডকে এই দায়িত্ব দেয় বিএসইসি।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা করে হলেও কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি। তাদের মতো ইস্যু ম্যানেজারও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যান।

এসব ছাড়াও ড্রাগন সোয়েটার এন্ড স্পিনিং লিমিটেডের কর সূক্রান্ত একটি জটিলতা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির কর প্রদানের ধারাবাহিকতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অমীমাংসিত রয়েছে।

…………….চলমান।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ/এলকে