নিজস্ব প্রতিবেদক :
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে না জানিয়ে এখন থেকে যেখানে-সেখানে আর বোর্ড সভা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বা প্রধান কার্যালয় যে শহরে অবস্থিত, সেখানেই বোর্ড সভা করতে হবে। তবে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে বাইরে সভা করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তা জানাতে হবে। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি, নিরীক্ষা বা অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। একই নির্দেশনায় ব্যাংক পরিচালকদের সম্মানী ও ভ্রমণ বাবদ খরচও পুনর্নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিচালকদের সভায় উপস্থিতির সম্মানী বাড়ানো হলেও মাসে সর্বোচ্চ কটি সভার জন্য সম্মানী পাবেন, সেটি বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের বোর্ড সভা পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিত ও খরচ কমাতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সভা অনুষ্ঠানের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক ব্যাংকই দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যয়বহুল বোর্ড সভা করে চলেছে। এতে করে ব্যাংকের পরিচালনা খরচ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এখানে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেসব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত, সেসব ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সভা হয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে, নয়তো রাজধানীরই অন্য কোনো স্থানে করতে হবে। কিন্তু কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল বা অন্য কোথাও এ ধরনের সভা করতে হলে তার প্রয়োজন সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।
এদিকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও নীতিনির্ধারণী কমিটির সভায় উপস্থিতির জন্য একজন পরিচালক সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী পাবেন। এত দিন এ সম্মানীর পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার টাকা। সম্মানী বাড়লেও যত খুশি তত সভা করে সম্মানী বাবদ কোনো ব্যাংক পরিচালকদের অধিক আর্থিক সুবিধা দিতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, পর্ষদ ও কমিটির সভা যথাসম্ভব সীমিতসংখ্যক রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাসে পর্ষদ ও কমিটির যত সভাই হোক না কেন, একজন পরিচালক সর্বোচ্চ দুটি পর্ষদ, চারটি নির্বাহী কমিটি, একটি নিরীক্ষা কমিটি ও একটি ঝুঁকি কমিটির সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানী পাবেন। সেই হিসেবে একজন পরিচালক পর্ষদ ও কমিটি সভা মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার টাকা (মোট আটটি সভা) সম্মানী পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, যদি কোনো ব্যাংকের পরিচালককে পর্ষদ বা কমিটির সভায় অংশ নেওয়ার জন্য দেশের অন্য কোনো শহর বা স্থান থেকে প্রধান কার্যালয়ে আসতে হয়, সে ক্ষেত্রে ওই পরিচালককে সর্বোচ্চ দুই দিনের হোটেল ও ভ্রমণ খরচ দেওয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, পর্ষদ সভায় যোগ দিতে ব্যাংকের একজন পরিচালককে সিলেট থেকে ঢাকায় আসতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই পরিচালক ঢাকায় থাকার ক্ষেত্রে দুই দিনের হোটেল খরচ ও সিলেট-ঢাকা আসা-যাওয়ার খরচ পাবেন। এ ক্ষেত্রে হোটেল, ভ্রমণ টিকিটসহ খরচের রসিদ দাখিল করতে হবে। আগে এ ধরনের পরিস্থিতিতে হোটেল ও যাতায়াত ভাতা দেওয়া হলেও সুনির্দিষ্ট দিনের বিধান ছিল না।
আর কোনো ব্যাংকের পরিচালক যদি অনিবাসী বা বিদেশি নাগরিক হন, তাহলে ওই পরিচালক সভায় উপস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ তিন দিনের হোটেল ও আসা-যাওয়ার বিমান খরচ পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিদেশে বসবাসকারী একজন পরিচালক বছরে সর্বোচ্চ চারটি সভায় উপস্থিতির জন্য এ ভাতা পাবেন। বছরে চারটির বেশি সভায় উপস্থিতির জন্য কোনো পরিচালককে হোটেল ও যাতায়াত বাবদ ভাতা দিতে পারবে না ব্যাংক।