শেয়ারবাজার নিয়ে বিক্ষোভকারীদের শায়েস্তা করবে ডিএসই

dseস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত মঙ্গলবার মোটামুটি দীর্ঘ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে আছে নিজেদের সাফাই, ভাবমূর্তির দোহাই আর অন্যের দোষারোপ। অর্থাৎ তাদের সবাই ভালো। সুতরাং, সমালোচনা করা মানেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট। অতএব, ভাবমূর্তির খাতিরে চুপ থাকতে হবে। তারপরও চুপ না থাকলে শেয়ারবাজার নিয়ে বিক্ষোভকারীদের শায়েস্তা করার কথাও বলেছে ডিএসই।

শুরুতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কিছু অংশ তুলে ধরে যাক। ডিএসই বলেছে, যে কেউ ইচ্ছা করলেই শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করতে পারবে না, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিশ্বের উন্নত স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং সবই করা হচ্ছে শেয়ারবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে৷ বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সম্বন্ধে যাদের কিছু ধারণা আছে, এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা, তারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন। তারপরও এ নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা প্রয়োজন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসই শেয়ারবাজারের সম্প্রতি পতনকে বলেছে ‘কিছুটা বাজার সংশোধন’। তবে তাদের আপত্তি হচ্ছে ‘সংশোধন’ বুঝতে না পারা। বিনিয়োগকারীরা কেবল যে সংশোধন বোঝেনি তা নয়, উল্টো ‘স্বল্পসংখ্যক বিনিয়োগকারী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন৷ এ বিক্ষোভের ফলে দেশ ও বিদেশে আমাদের শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে’—এ হচ্ছে ডিএসইর বক্তব্য। তাহলে কী করণীয়—ডিএসই সে উপায়ও বাতলে দিয়েছে।

ডিএসইর মতে প্রথম উপায় হচ্ছে, ‘বিনিয়োগকারীদের অত্যন্ত ধৈর্য বজায় রাখা,’ এবং ‘কোনোরূপ অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করা’। এই আহ্বানে যদি কাজ না হয়, তাহলে বিকল্প উপায় হিসেবে ডিএসই ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে শেয়ারবাজারের মতো স্পর্শকাতর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা’। কেননা, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে এর চেয়েও বেশি উত্থান-পতন হয়৷ সেখানে কখনো ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন অথবা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় না।’

এ অবস্থায় ‘যে কেউ ইচ্ছা করলেই দেশের শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করতে পারবে না’—বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসইর এই বক্তব্য কতজন বিশ্বাস করেন, এ নিয়ে তাঁরা একটি জরিপ করে দেখতে পারেন। ‘সবই করা হচ্ছে শেয়ারবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে’—জরিপে এই প্রসঙ্গও তারা আনতে পারে। তাহলেই বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি প্রমাণিত হবে।

‘বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মূলধন উধাও ও পাচার’—গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের সংবাদ নিয়েও আপত্তি ডিএসইর। অবশ্যই সংবাদমাধ্যমের আরও সতর্ক হওয়া দরকার। অবশ্যই অর্থনীতির শাস্ত্র অনুযায়ী বাজারের সিকিউরিটিজের মূল্য ওঠা-নামার সঙ্গে বাজার মূলধন বাড়ে বা কমে, এর সঙ্গে টাকা উধাও বা পাচার হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই৷ তবে এখন পর্যন্ত দুবার দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সর্বস্বান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একবার জনগণের করের টাকায় ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে। বড় দুই কেলেঙ্কারি থেকে বলা যায়, এ দেশে কারসাজি করে টাকা উধাও করা হয়। এমনকি এখনো এই কারসাজি চলে। সেটা বন্ধ করার মতো সাহস নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখাতে না পারলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কখনো ফিরে আসবে না। আর সত্যিকার অর্থে বাজারের ওপর আস্থা ফিরলে তবেই উত্থান-পতনকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেবে বিনিয়োগকারীরা। তখন আর বিক্ষোভের প্রয়োজন হবে না, ভাবমূর্তির সংকটও হবে না। আগে এ কাজ করে দেখান।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/বি/জেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *