সোমবার ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়ে মার্কিন শেয়ারবাজার। উচ্চ সুদের হারের কারণে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার শেয়ার বিক্রির ধুম পড়ে যায়। শুরু হয় দরপতন। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০টি প্রধান কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ইনডেক্স ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ২৪ হাজার ৩৪৫ পয়েন্টে নেমেছে। বাজারে বড় ধসের মুখে বিনিয়োগকারীদেরকের আশ্বস্ত করতে হোয়াইট হাউজ বলেছে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মৌলিক দিকগুলোর প্রতি নজর দেয়া হচ্ছে, যেগুলো দারুণ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
ডাউ জোন্সের পাশাপাশি বৃহত্তর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিয়ে তৈরি সূচক নাসদাক ৩ দশমিক ৭ শতাংশ দর হারিয়েছে। লন্ডনের প্রধান কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত এফটিএসই ১০০ সূচক ১০৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে।
মঙ্গলবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতেই ওয়াল স্ট্রিটকে অনুসরণ করে দরপতন শুরু হয়। জাপানের প্রধান সূচক নিক্কেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আগে ২২৫ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ দর হারায়, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স দর হারিয়েছে ২০০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার সূচক কোসপি ২ দশমিক ৩ শতাংশ দর হারিয়েছে।
এর আগে অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে গিয়েছিল। ২০১৬ সালের নভেম্বরে নির্বাচত হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাড়ার এই বিষয়ে বেশ কয়েকবার টুইট করেছেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোটলি ফুলের প্রধান নির্বাহী ডেভিড কোউ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংবাদ আশাতিরিক্ত শক্তিশালী। তাই অন্যভাবে দেখলে, ইতিবাচক অর্থনৈতিক সংবাদের কারণেই বাজার সংশোধন হয়েছে।’
শতাংশীয় হিসেবে দেখলে ২০১১ সালের অগাস্টের ‘ব্ল্যাক মানডে’র পর থেকে ডাউয়ের সবচেয়ে বড় দরপতন হয়েছে। ওই সময় স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড পুওরস যুক্তরাষ্ট্রে এর ঋণমান নামিয়ে দিয়েছিল। আমেরিকান ও বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাসের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদফতর চাকরি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে বেতন আশাতীত বেড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এরপর শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে। সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাকার্থি বলেন, বেতনের পরিমাণ হঠাৎ করে নি¤œ সুদের হারকে ধসিয়ে দিয়েছে। ‘শেয়ার বিক্রির হিড়িকের মধ্য দিয়ে কাক্সিক্ষত সুদের হারের চেয়ে বেশি হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।’
এর ফলে, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে অর্থ বিনিয়োগ করছেন বন্ডের মতো সম্পদে, যাতে উচ্চ সুদের হারের সুবিধা নেয়া যায়। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের পোর্ট ফোলিও ম্যানেজার এরিন গিবস বলেন, ‘এটা অর্থনীতির পতন নয়। এর মধ্যে এই উদ্বেগ নেই যে বাজার ভালো করবে না। ‘এটার অর্থ হলোÑ অর্থনীতি আশাতীত ভালো করেছে এবং আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।’
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ