হংকংয়ের অর্থনীতি এখনো চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

000000000000000000স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

উদ্বেগ বাড়ছে যে হংকং এ তিন মাস ধরে যে গনতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ চলছে তার বিরুদ্ধে চীন কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে।

গত দুই দশক ধরে বেইজিং ব্যাপক ভাবে লাভবান হচ্ছে এই তাদের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল থেকে যেটা কিনা এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সুতরাং কীভাবে এটা সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে?
সংকট ঘনীভূত হচ্ছে

বিবিসির চীনের সম্পাদক হুয়ার্ড ঝাং বলছেন লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে বেইজিং হংকং এর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে বেইজিং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ মনোভাব দেখাচ্ছে।

সম্প্রতি চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিক্ষোভ বিরোধী পোষ্ট বেড়ে গেছে। এক বিরল সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেছেন “যদি হংকং সরকারের দ্বারা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায় তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার সেটা বসে বসে দেখবে না”।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন তিনি উদ্বিগ্ন। দ্বীপটির অর্থনীতি ইতিমধ্যে এই ১১ মাসের বিক্ষোভের প্রভাব বুঝতে পারছে। স্থানীয় অর্থনীতির ২০ শতাংশ আসে পর্যটন এবং খুচরা ব্যবসা থেকে। এই খাতগুলো বিক্ষোভের কারণে সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে।

ব্যবসায়ী, বিমানবন্দরের কর্মী, এবং সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার হল সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

যার ফলে এশিয়ার বাণিজ্যিক এই বিশাল কেন্দ্রে বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে।

দক্ষিণ চায়না মর্নিং পোষ্ট খবরের কাগজের হিসেব অনুযায়ী একদিনের ৫ ই অগাস্টের বিক্ষোভে ৩’শ মিলিয়ন থেকে দুই দশমিক ৬ বিলিয়ন হংকং ডলার খরচ হয়েছে।

কিন্তু যদি চীন সিদ্ধান্ত নেয় বিক্ষোভ কারীদের হটিয়ে দেবে তাহলে আরো বড় অংকের লোকসানের মুখে পরতে হবে বলছিলেন ঝাং।

তিনি বলছিলেন ” আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং খরচ বিহীন বন্দর হিসেবে হংকং এর যে মর্যাদা আছে সেটা অপূরণীয় ভাবে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে”।

“বেইজিং আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে পরবে। সব পশ্চিমা সরকার চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করবে এবং চীনের অর্থনীতি আর বিশ্বে তাদের যে মর্যাদা সেটার জন্য ভুগতে হতে পারে”।

অর্থনীতির প্রবেশপথ

হংকং চীনের জন্য অর্থনীতি উভয়- বাণিজ্য এবং আর্থিক খাতের চাবিকাঠি। ২০১৭/১৮ সালে চীন ১২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বিদেশি বিনিয়োগ পায় যেটা ৯৯ বিলিয়ন ডলার আসে হংকং হয়ে। এর অর্থ মোট অর্থ প্রবাহের ৮০ শতাংশ আসছে হংকং থেকে।

এর কারণ হংকং এর আইন এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ কোম্পানিগুলোর জন্য একটা নিরাপদ বিনিয়োগের স্থান করে দিয়েছে।

ঝাং বলছিলেন এই অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটা বিশেষ সুবিধা পায়। সেগুলো বাণিজ্য, প্রযুক্তি, শুল্কের ক্ষেত্রে।

আর এই সুবিধাটা চীন ভোগ করে অন্যভাবে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর যে শুল্ক নির্ধারণ করেছে, চীন যদি সেটা হংকং হয়ে ব্যবসাটা করে তাহলে তাদের উপর আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐ শুল্কের বোঝা বইতে হয় না।

ঝুঁকি

কিন্তু এই বিক্ষিপ্ত অবস্থা কি কোম্পানিগুলোকে ভীত করবে এবং অর্থ চীনের বাইরে চলে যাওয়া বেড়ে যাবে?

ঝাং বলছেন “হংকং এ জনসংখ্যা ৭ মিলিয়ন। তাদের রিজার্ভ রয়েছে ভারত,দক্ষিণ কোরিয়া এবং ব্রাজিলের চেয়ে বেশি”।

চীনের বৈদেশিক অর্থের রিজার্ভ বিশ্বের সবচেয়ে বড় যেটা পরিমাণ তিন দশমিক এক ট্রিলিয়ন ডলার।

যাইহোক বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের অর্থনীতিকে বড় ধরণের ঝাঁকুনি দিয়েছে। এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষের দরকার সব সম্পদ দিয়ে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের অবস্থা স্থিতিশীল রাখা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কোম্পানিগুলোর জন্য আরো উৎসাহিত করেছে তাদের ব্যবসাকে অন্য দেশে নিয়ে যেতে।

প্রতিযোগিতার বাজারে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং ফিলিপিন্সে তাদের ব্যবসার একটা অংশ পূনস্থাপন করতে চাইবে।

গতবছর মার্কিন চেম্বার অব কর্মাস একটা জরিপ চালিয়ে দেখে দক্ষিণ চীনের তাদের ৭০ শতাংশ সদস্য দেশটির বাইরে ব্যবসা পূনস্থাপন করার কথা বিবেচনা করছে।

দুই দশক আগে হংকংকে চীনের যেমন প্রয়োজন ছিল এখন আর নিশ্চিতভাবেই তেমনটা নেই।

সাবেক এই ব্রিটিশ কলোনি যখন ১৯৯৭ সালে চীনের নিয়ন্ত্রণে আসলো তখন চীনের সমগ্র অর্থনীতির ১৮ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করতো তারা।

ক্যাপিটাল ইকনোমিক্স ইন লন্ডন এর সিনিয়র এশিয়া বিষয়ক অর্থনীতিবিদ গ্যারেথ লেইদার বলছেন ” আমার বিশ্বাস চীনের সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল নিয়ন্ত্রণে রাখা”।

“আমি মনে করি তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে হংকং এর কিছু সাফল্য তারা ত্যাগ করবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ তারা চীনের মূল ভূখণ্ড এবং হংকং এর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে’। কিন্তু চীনের যেকোন পদক্ষেপ যদি হংকং এর স্বায়ত্তশাসনের উপর আঘাত করে সেটা ব্যবসার জন্য খারাপ খবর হবে।-বিবিসি

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *