স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
দেশের বাইরে জাহাজ রফতানি তিন গুণে উন্নীত করার লক্ষ্যে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করবে বলে জানিয়েছে তালিকাভু্ক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড।
জাহাজ শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও ওয়েস্টার্ন মেরিনের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তুলে ধরেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাখাওয়াত হোসেন।
জানা যায়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে জাহাজ শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেক্ষাপটে নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের বাইরে জাহাজ রফতানি তিন গুণে উন্নীত করার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে কোম্পানিটি। এজন্য তারা রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওয়েস্টার্ন মেরিন ফেরি, কার্গো ভেসেল, প্যাসেঞ্জার ভেসেল, অফসোর পেট্রল ভেসেল, হাই-টেক ফিশিং ট্রলার, টাগবোট, ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাংক নির্মাণ করে। ২০০০ সালে কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ১৪৩টি জাহাজ নির্মাণ করেছে। দেশী চাহিদা মিটিয়ে এখন পর্যন্ত জার্মানি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, একুয়েডর, তানজানিয়া, পাকিস্তান, গাম্বিয়া, উগান্ড, ভারত, কেনিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়েছে ৩১টি জাহাজ। অভ্যন্তরীণ ও রফতানি আদেশ নিয়ে বর্তমানে আরো ৩৮টি জাহাজ নির্মাণাধীন। রফতানি চাহিদার মধ্যে আটটি জাহাজ ভারত, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি কেনিয়ায় অফসোর পেট্রল ভেসেল রফতানি করে ‘ওয়ার্ক বোট ওয়ার্ল্ড বেস্ট লার্জ পেট্রল বোট বিল্ডার-২০১৭’ পুরস্কার পেয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন।
জাহাজ শিল্পের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে কোম্পানির এমডি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউরোজোনের সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হওয়া শুরু করেছে, যা জাহাজ শিল্পের জন্য ইতিবাচক। বিশ্বব্যাপী মাঝারি ও ছোট জাহাজ নির্মাণে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাজারে বাংলাদেশের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রফতানির সুযোগ রয়েছে। দেশে বর্তমানে জাহাজ রফতানিতে আমাদের বাজার অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশ হওয়ায় এ রফতানিতে বড় সুযোগ তৈরি হবে ওয়েস্টার্ন মেরিনের জন্য। বৈশ্বিক বাজারের পরিধি ২০০ বিলিয়ন ডলার হলে তাতে ওয়েস্টার্ন মেরিন ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সুযোগ পাবে বলে আমরা আশাবাদী।
ওয়েস্টার্ন মেরিনের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজার ও রফতানি মিলে কোম্পানির বর্তমান বার্ষিক বিক্রি ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি হলেও পাঁচ বছরে তা ৮০০ কোটির কাছাকাছি নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কোম্পানির এ সম্প্রসারণকাজে রাইট শেয়ার ইস্যুর পাশাপাশি নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে নতুন করে বিনিয়োগের পরিমাণ ও রাইট শেয়ার থেকে মূলধন উত্তোলনের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক বাজারে জাহাজ শিল্পের মন্দাবস্থার কারণে কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের উচ্চসুদের কারণে ঋণখেলাপি হয়েছে। ব্যবসার বর্তমান ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন সম্পন্ন করতে পারলে এ সংকট থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম, পরিচালক আবদুল মবিন, সোহেল হাসান ও স্বাধীন পরিচালক ওয়ালি-উল-মারূফ মতিন উপস্থিত ছিলেন।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ/টিএস