আইপিও আবেদনে স্টক এক্সচেঞ্জকে ৯০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত মতামত দিতে হবে

bsecনিজস্ব প্রতিবেদক :

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে ইচ্ছুক কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) খসড়া প্রসপেক্টাস জমার ৯০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত মতামত দিতে হবে স্টক এক্সচেঞ্জকে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইপিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ এ বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫ অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির আইপিও আবেদনে সম্মতি, নাকচ কিংবা পর্যালোচনার জন্য প্রায় ছয় মাস সময় পায় কমিশন। নির্ধারিত সময়ে আইপিও আবেদন নিষ্পত্তি করতে হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কোনো আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের চূড়ান্ত মতামত পেতে ছয় মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আইপিও বাতিল করতে হয়েছে কমিশনকে। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলোকে নতুন করে আইপিও আবেদন করতে হয়েছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্তি প্রবিধানমালা ২০১৫ (লিস্টিং রেগুলেশনস) অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জকে কোম্পানির আইপিও আবেদন-সংক্রান্ত নথি প্রদানের ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক অভিমত দিতে হয়। পরবর্তীতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, কোম্পানির পরিচালক বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নিরীক্ষক, সম্পদ পুনর্মূল্যায়নকারী, ইস্যু ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা চাইতে পারে। ব্যাখ্যা পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের চূড়ান্ত মতামত পর্যবেক্ষণসহ কমিশনে দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তালিকাভুক্তি প্রবিধানমালায়। এক্ষেত্রে আইপিও অনুমোদনের বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিলে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির বিষয়ে অনাপত্তি প্রদানেরও বিধান রাখা হয়েছে।

এদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিগুলো। এতে স্টক এক্সচেঞ্জও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইপিও সম্পর্কে চূড়ান্ত মতামত দিতে ব্যর্থ হয়। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং বিভাগে দক্ষ জনবলের স্বল্পতাও নির্ধারিত সময়ে চূড়ান্ত মতামত প্রদানে ব্যর্থতার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং বিভাগের অভিজ্ঞ প্রায় সব কর্মকর্তাকেই বদলি করা হয়। এতে আইপিও পর্যালোচনার জন্য বিভাগটি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে আইপিও আবেদন নিষ্পত্তিতে সমস্যায় পড়েছে কমিশন। কোম্পানিগুলোও দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়ছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চূড়ান্ত মতামতের জন্য ৯০ দিন সময় বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৯০ দিনের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের চূড়ান্ত মতামত পাওয়া গেলে পাবলিক ইস্যু রুলসে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে আইপিও আবেদন নিষ্পত্তি করা কমিশনের জন্য সহজ হবে।

পাবলিক ইস্যু রুলস, ২০১৫ অনুসারে কোনো কোম্পানির আইপিও আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ছয় মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির আইপিও আবেদন জমার পর সেটি সম্পূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিনা, কমিশন সেটি পর্যালোচনা করে দেখে। পরীক্ষা শেষে আবেদনে কোনো অসম্পূর্ণতা কিংবা ত্রুটি পাওয়া গেলে কমিশন ইস্যুয়ার কোম্পানিকে তা লিখিতভাবে জানায় এবং অসম্পূর্ণ আবেদন ঠিক করতে ইস্যুয়ারকে ৪০ দিন সময় বেঁধে দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইস্যুয়ার অসম্পূর্ণ আবেদন ঠিক করতে ব্যর্থ হলে নতুন করে আবেদন করতে হয়। আর আবেদন ত্রুটিমুক্ত কিংবা গ্রহণযোগ্য হলে কমিশন পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে ইস্যুয়ারকে সম্মতিপত্র পাঠয়। অন্যদিকে আবেদন নাকচ হলে সর্বশেষ পত্রবিনিময়ের পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট কারণসহ নাকচপত্র কোম্পানির কাছে ইস্যু করা হয়। অবশ্য আবেদন নাকচের ৬০ দিনের মধ্যে কোম্পানি রিভিউয়ের আবেদন করতে পারবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীতে আইপিও আবেদন পর্যালোচনা শেষে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্যালোচনা বা অভিমত প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে আইপিওর খসড়া প্রস্তাবের ওপর পর্যালোচনা প্রতিবেদন বা সুপারিশ প্রদান ঐচ্ছিক ছিল। আইপিও অনুমোদন কিংবা নাকচের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে কমিশন। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ শুধু কোম্পানি প্রদত্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করেই মতামত দিয়ে থাকে। আইপিও প্রক্রিয়াকালীন স্টক এক্সচেঞ্জকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি পরিদর্শনের ক্ষমতা দেয়া না হলেও তালিকাভুক্তির পর কমিশনকে অবহিত করে কোম্পানির কার্যালয় বা কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Save

Save

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *