দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনার ঋণ পেয়েছেন ৬৭ হাজার গ্রাহক : বাংলাদেশ ব্যাংক

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

করোনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় ২০২০ সালের এপ্রিলে কম সুদের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদের আরও বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এসব প্যাকেজের আওতায় ব্যাংকগুলো কম সুদে গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে, যেখানে প্রায় অর্ধেক সুদ ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে সরকার।

প্রণোদনা প্যাকেজের প্রথম পর্যায়ের বিতরণ কার্যক্রম এর মধ্যে শেষ হয়েছে। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফা ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। দ্বিতীয় দফায় প্যাকেজ থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬৭ হাজার গ্রাহক ঋণ পেয়েছেন। এসব গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল থেকে ৩২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। এ ঋণ পেয়েছে ৩ হাজার ৩০৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় মেয়াদে এ তহবিল থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। ঋণ পেয়েছে ৯৭২টি প্রতিষ্ঠান। এই তহবিলের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ হলেও গ্রাহকদের দিতে হচ্ছে সাড়ে ৪ শতাংশ।

এ ছাড়া কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দ্বিতীয় মেয়াদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। ২০ হাজার কোটি টাকার এই তহবিল থেকে ঋণ পেয়েছে ৩৫ হাজার ৭৬০টি প্রতিষ্ঠান। প্রথম দফায় এ তহবিল থেকে ১৫ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়, ঋণ পেয়েছিলেন ৯৭ হাজার ৮১৪ জন গ্রাহক। এ ঋণের সুদ ৯ শতাংশ, তবে এর মধ্যে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৫ শতাংশ।

কৃষি খাতের পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের অধীনে দ্বিতীয় দফায় বিতরণ হওয়া ঋণ পেয়েছেন ৩০ হাজার ২৩৮ গ্রাহক, তাদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩৭৯ কোটি টাকা। গ্রাহক পর্যায়ে এই ঋণের সুদহার ৪ শতাংশ, ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঃ অর্থায়ন পাচ্ছে। প্রথম দফায় এই তহবিল থেকে বিতরণ হয়েছিল ৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। ঋণ পায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৬ জন কৃষক ও কৃষি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে প্রথম দফায় ঋণ নিতে যত আগ্রহ ছিল, দ্বিতীয় দফায় তত আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কারণ, যারা ঋণ নিয়েছেন, তাদের ঋণ পরিশোধের সময় এসেছে। দ্বিতীয় দফায়ও পুরোনোরা ঘুরেফিরে আবার ঋণ পাচ্ছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ১০টি প্রণোদনা তহবিল থেকে দুই দফায় সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ২১৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতের ৪২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, প্রি–শিপমেন্ট খাতে পুনঃ অর্থায়নে ঋণ গেছে ৫১৩ কোটি টাকা, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ২ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে।

এ ছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, এসএমই খাতের ঋণ নিশ্চয়তা স্কিম থেকে ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা, গ্রাহকের সুদ ভর্তুকি বাবদ ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ও কৃষি খাতের পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের আওতায় ৪ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। তবে পর্যটন খাতের হোটেল, মোটেল ও থিম পার্কের কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ১ হাজার কোটি টাকা তহবিল গঠন হলেও কোনো ঋণ বিতরণ হয়নি।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *