জাতীয় সংসদ সবরে ছিল শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির অভিযোগ ও দাবিদাওয়া

downloadজাতীয় সংসদের অধিবেশনে সরকারি জোটের কয়েকজন সাংসদ শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারি সম্পর্কে যেসব অভিযোগ ও দাবিদাওয়া তুলেছেন, তাতে সাধারণভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতিফলন রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়।

প্রথমত, শেয়ারবাজারে নজিরবিহীন কারসাজির হোতাদের বিচার সবাই চান। দ্বিতীয়ত, সেই হোতাদের মধ্যে যদি সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনও থাকেন, তবে তাঁরাও যেন শাস্তি পান, কোনোভাবেই পার পেয়ে না যান। তৃতীয়ত, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ঘটনার তদন্তের জন্য খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর সেই কমিটি যেভাবে মহলবিশেষের রোষানলে পড়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। একজন সাংসদ বলেছেন, তদন্ত কমিটিকে যদি এভাবে মানহানির মামলার মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কমিটির জন্য কাজ করতে কেউ আগ্রহী হবেন না।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে সরকারি জোটের সাংসদেরা শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতাদের শাস্তির দাবি তুলেছেন অত্যন্ত কঠোর ভাষায়। অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছেন, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত, এ বিষয়ে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে আরও কিছু তথ্য প্রয়োজন, সেসবের অভাবেই তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আশা করতে চাই, অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য সান্ত্বনামূলক নয়। সরকারের কাছে যখন কিছু তথ্য রয়েছে, যখন সরকার প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ারবাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল, তাহলে তাদের চিহ্নিত করে যথোপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের একান্ত কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেয়ারবাজারে কারসাজির শিকার লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা এখনো ফিরে আসেনি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য তা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। শেয়ারবাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনেও সংঘটিত কারসাজির প্রতিকার করা প্রয়োজন। যাঁরা এভাবে শেয়ারবাজারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, যেসব প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরা যাচ্ছে না, তা পাওয়ার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আরও অনুসন্ধান চালানো হোক, এবং তা করা হোক আরও দ্রুতগতিতে, অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে। কারসাজির হোতাদের আইনানুগভাবে বিচার করে শাস্তি দিতে হলে আদালতে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে হবে। সেসব তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের অভাবে কারসাজির হোতারা পার পেয়ে গেলে ভবিষ্যতে এমন কারসাজির পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে, কেননা তাতে কারসাজির হোতাদের উৎসাহ আরও বেড়ে যাবে।

তাই অধিকতর অনুসন্ধান চালিয়ে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে কারসাজির হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি কী কী প্রক্রিয়ায় শেয়ারবাজারে কারসাজি হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা প্রয়োজন। তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অধিকতর সচেতনতা সৃষ্টি হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো অসৎ গোষ্ঠীর পক্ষে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়িয়ে শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করা সহজ হবে না।

রফিকুল ইসলাম
সাধারণ বিনিয়োকারী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *