আইনের আওতায় আসছে উবার, পাঠাও

uberস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

সরকার যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহন সংকট নিরসনে মোবাইল ফোনে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাকে বৈধতা দিতে চলেছে। এর ফলে ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’য়ের মতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অ্যাপগুলো আইনি কাঠামোর আওতায় আসবে। এ-সংক্রান্ত ‘রাইড শেয়ারিং নীতিমালা, ২০১৭’র খসড়া আজ সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিমালাটি অনুমোদন পেলে অ্যাপ ব্যবহার করে গাড়ি ভাড়া করার ক্ষেত্রে আর আইনি বাধা থাকবে না। গত বছরের জুনে এ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত অক্টোবরে এর প্রথম খসড়া তৈরি হয়। সরকারের ১৭টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত সমন্বয় করে তা গত ১৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের সুবিধা চালু করে ‘স্যাম’। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকায় একই প্রক্রিয়ায় গাড়ি ভাড়া দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘উবার’। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) তখন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া বৈধ নয়। এসব সেবা বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাত্রীদের সমালোচনার মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ এ অবস্থান থেকে সরে আসে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, বৈধতা দেওয়া হবে ‘উবারের’ মতো সেবাগুলোকে। তবে জনপ্রিয়তা পেলেও শুরু থেকেই নীতিমালা ছাড়াই চলছে অ্যাপভিত্তিক গাড়ি ভাড়া। অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছামাফিক ভাড়া নির্ধারণ করছে। বাস, অটোরিকশাসহ অন্যান্য গণপরিবহন মালিকরা যাত্রী পরিবহনে রাজস্ব দিলেও অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি পরিচালনাকারীদের তা দিতে হচ্ছে না। এতে প্রচলিত পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে চলা প্রাইভেটকারের ভাড়া কিছুতেই সরকার অনুমোদিত ট্যাক্সি ক্যাবের তুলনায় বেশি হতে পারবে না। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্যাক্সি ক্যাবে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৩৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ৫০ টাকা। ‘উবারের’ সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১৮ টাকা।

ঢাকায় অটোরিকশায় প্রতি কিমি. ভাড়া ১২ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা। অ্যাপের মাধ্যমে চলাচলকারী অটোরিকশার ভাড়াও এর বেশি হতে পারবে না। নীতিমালায় এ বিধান থাকছে। অবশ্য মোটরসাইকেলের ভাড়া কত হবে তা স্পষ্ট নয় খসড়া নীতিমালায়।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল- এই পাঁচ ধরনের যানবাহন পরিচালনা করা যাবে। অ্যাপ পরিচালনা-সংক্রান্ত শর্তাবলিতে বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনায় বিআরটিএ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, চালকের ছবি, নাম, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশনের নম্বরসহ মোটরযানের অবস্থান যাত্রী সুস্পষ্টভাবে তার মোবাইল ফোনে দেখতে পাবেন। বর্তমানে যাত্রীরা শুধু চালকের ফোন নম্বর, নাম ও গাড়ির নম্বর দেখতে পারেন। চালকের ছবি দেখার সুযোগ নেই।

রাইড শেয়ারিং কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন পেতে অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে ঢাকায় কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রামে ৫০টি এবং অন্যান্য এলাকায় ২০টি গাড়ি থাকতে হবে। একটি গাড়ি একই সময়ে একাধিক অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। তবে দুই মাস পর পর অ্যাপ পরিবর্তন করতে পারবে। একজন মালিক একটির বেশি প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহন করতে পারবেন না।

রাইড শেয়ারিং কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন পেতে ১ লাখ টাকা ফি দিতে হবে। নবায়নে বছরে ১০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করা যানবাহনকেও ফি দিতে হবে। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশার জন্য বছরে ১ হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেলে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সম্পর্কে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, যাত্রীর ভ্রমণের শুরু থেকে সমাপ্তি, ভ্রমণের মোট সময় ও দূরত্ব, মোট ভাড়ার পরিমাণ কমপক্ষে তিন মাস সংরক্ষণ করতে হবে। যাত্রীর অভিযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিআরটিএকে জানানোর ব্যবস্থা থাকছে নীতিমালায়।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *