ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবি সাবেক গভর্নরের

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক:

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ যাতে অর্থনীতিকে কাবু করতে না পারে, সেজন্য এখন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

এজন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের (এসএমই) প্রণোদনা বাড়ানো ও সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ দেয়ার সময় বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান বজায় রাখতে শিল্প খাতের জন্য আরও এক দফা ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

রবিবার (৬ ডিসেম্বর) এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের জন্য কর্মশালা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ কর্মশালা আয়োজনে সহযোগিতা করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যাতে অর্থনীতিকে বেশি কাবু করে না ফেলে সেজন্য এখন থেকেই আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান-পাটসহ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে। শিল্প খাতকেও চাঙ্গা রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে শিল্প খাত যেন বসে না যায়, সেজন্য কর্মসংস্থান বজায় রাখতে তাদের আরও একদফা কম সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য শিল্প খাতকে কথা দিতে হবে তারা কর্মসংস্থান বজায় রাখবেন। এটি করতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।’

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়ে আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে- সিটি ব্যাংক ও বিকাশ মিলে তারা ১০ হাজার টাকার ছোট ঋণ এসএমইকে দিতে পারে। এটা মাত্র তিন মিনিটে স্যাংশন (অনুমোদন) হয়ে যায়। এই অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হয়ে থাকলে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্যাশ ফ্লোর হিসাব দেখে ই-কেওয়াইসি নিয়ে ১০, ২০, ৩০ হাজার টাকার মতো ঋণ দেয়া যেতে পারে। ছয় মাস, এক বছরের জন্য এই ঋণ দেয়া যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সব থেকে বড় সমস্যা চাহিদা কমে যাওয়া। আমাদেরকে চাহিদা বাড়াতে হবে, ভোগ বাড়াতে। মানুষের আয়-রোজগার কমে যাওয়ার কারণে চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা ও মানুষের আয়-রোজগার বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফিসক্যাল পলিসি (রাজস্ব নীতি) সহায়তা দিতে হবে।’

সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘আমাদের ধোলাই খাল থেকে রফতানিমুখী শিল্পের একটি পণ্য কিনতে হলে ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু চীন থেকে আমদানি করতে সেই পণ্যে ট্যাক্স দেয়া লাগে না। এই জায়গাতে আমাদের পলিসি সহায়তা দিতে হবে। সেই সঙ্গেগভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের একটি অংশ এসএমই’র জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। ভারতে এটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও এটার দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চায়।’

আতাউর রহমান বলেন, ‘করোনার সময় সরকার এসএমই’র জন্য বড় ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এই ঋণ বিতরণের গতি তেমন বাড়ছে না। ৩০-৪০ শতাংশের মতো বিতরণ করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ঋণের সময় বাড়ানো হয়েছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যেহেতু এসে গেছে, তাই আরও ছয় মাস সময় বাড়ানো উচিত। সেই সঙ্গে এসএমই খাতের প্রণোদনার পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ, ইআরএফ’র সভাপতি শারমীন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *