বৈষম্য কমাতে প্রয়োজন প্রবৃদ্ধির গুণগতমানের উন্নতি : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

deboprioস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেলেও আয় বৈষম্য, সম্পদের বণ্টন বৈষম্য ও দারিদ্র্য কমছে না। ফলে প্রবৃদ্ধির গুণগতমানের উন্নতি না হলে সম্পদের বৈষম্য ও দারিদ্র্য কমবে না।

শনিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৭-১৮; প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন মতামত তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদরা।

সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ বিগত দশক ধরে শোভন প্রবৃদ্ধির হার ধরে রেখেছে। এই শোভন প্রবৃদ্ধির ভেতরে অন্ধকার রয়েছে, তা হলো- কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়নি, দারিদ্র্য কমেনি। এর ফলে দারিদ্র্য, সম্পদের বৈষম্য ও ভোগের বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হয় না, বড় বড় প্রকল্পের টাকা অন্যত্র পাচার করা হয়।

তিনি বলেন, আগে আমরা প্রবৃদ্ধির পরিমাণ নিয়ে চিন্তিত থাকতাম। এখন প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি গুণগতমান নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। কারণ, আমাদের প্রবৃদ্ধি গরিব মানুষকে উপরে তুলতে পারছে না। গুণগতমান ছাড়া প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেলে ক্রমাগত বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।

দেশের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে দুর্বল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে একটা প্রতিশ্রুতির ভেতর দিয়ে বছর শুরু হয়েছে।  কিন্তু শেষে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাইনি।

প্রবৃদ্ধির গুণগতমান বৃদ্ধি না পাওয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আসা কমে যাওয়া। ফলে গ্রামাঞ্চলে ভোগের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা চলে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বছর শেষে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

২০১৭ সালকে ব্যাংকিং খাতের কেলেঙ্কারির বছর উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ২০১৭ সালে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট সংকট ২০১৮ সালে নিরসন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে ব্যাংকিংখাত চরম দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকের অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, ব্যক্তিগত ঋণ বেড়েছে, করের টাকায় পুঁজিকরণ করা হয়েছে, ব্যক্তিগত টাকা পাচারের ঘটনাও ঘটেছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার এমন দুর্বলতার পরও কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং সরকার উল্টো পথে হেঁটেছে। ব্যাংকিং আইন সংস্কার করে ব্যাংক পরিবারে সদস্য বৃদ্ধি করেছে।

তিনি বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির এমন পরিস্থিতির কারণ হিসেবে দায়ী হতে পারে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বা বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামো। তবে বড় যে কারণ দায়ী, তা হলো দেশের  অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনার জায়গা, প্রতিশ্রুতি ছিলো তা ব্যবহার করতে পারে নি।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে সরকারকে রক্ষণশীল অর্থনীতির দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক পর্যালোচনা প্রবন্ধ তুলে ধরেন রির্সাচ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। আরো উপস্থিত ছিলেন সিডিপি ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *