কালো টাকার উপর লক-ইন শর্ত প্রত্যাহারের দাবি সিএসই’র

cse-logo-sস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

বাজেটে (২০২০-২১) শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত (কালো টাকা) বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ বছরের লক-ইন এর শর্ত প্রত্যাহারসহ ৮ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার দাবি করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

আজ বুধবার ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।

চেয়ারম্যান বলেন, আসন্ন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যকার কর ব্যবধান বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যাবধান কমানোর কারণে ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো আরো নিরুৎসাহিত হবে বলে আমরা মনে করছি। আমরা অতালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২৫% থেকে কমিয়ে ২০% করার জন্য অনুরোধ করছি। এতে ভাল কোম্পানি সমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। যা পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধ করবে এবং স্বচ্ছ কর্পোরেট রিপোর্টিং এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, বাজেটে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে পুঁজি বাজারে তিন বছরের জন্য এ অর্থ বিনিয়োগ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষ সহ সরকারের অন্য কোন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করবেনা । এ বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাক্তিশ্রেণীর করদাতারা পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা বিনিয়োগকারীদের
জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে নূন্যতম তিন বছরের মধ্যে বিনিয়োগ প্রত্যাহার না করার শর্তটি তুলে দেয়ার জন্য আমরা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। যা ব্যক্তি শ্রেনীর করদাতাদেরকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আরো উৎসাহিত করবে।

দাবিগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে, দেশের বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করার জন্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বন্ডের সুদ ও বাট্টার ওপর উৎস কর এবং লেনদেন মূল্যের ওপর উৎস কর সমন্বয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যা পুঁজিবাজারে বন্ডের লেনদেন বাড়াবে বলে আমরা মনে করছি। দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট বিকশিত হলে সরকারি ও বেসরকারি খাতের বড় প্রকল্পে অর্থায়নের নতুন ক্ষেত্র ও সুযোগ তৈরি হবে বলে আমরা আশা করছি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে বন্ড মার্কেটকে আরো আকর্ষনীয় করার জন্য অর্থমন্ত্রী বন্ডের সুদ ও বাট্টা পরিশোধ করার সময় উৎসে কর কর্তনের বিধান রহিত করে সুদ ও বাট্টা পরিশোধ করার সময় উৎস কর কর্তনের প্রস্তাব করেছেন। তাছাড়া বন্ড লেনদেনের জন্য বর্তমান বিধান অনুসারে লেনদেন মূল্যের ওপর উৎসে কর কর্তনের পরিবর্তে লেনদেনর জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নির্ধারিত কমিশনের ওপর উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বন্ড মার্কেটের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে বলে আমরা আশা করছি।

আরো আছে যে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যাক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। আবার কর আদায়ে বাড়তি কিছু উদ্যোগ ও নিয়েছেন। বাজেটে ব্যাক্তিশ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করে ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। আবার করহারো কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে সর্বনিম্ন কর হার ছিল ১০ শতাংশ। এবার কর হার ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। তাছাড়া করহার ও পুনর্বিন্যাস এর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ আরো উতসাহিত করবে বলে আমরা মনে করি।

এছাড়াও কোন করদাতা অনলাইনে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিলে ২ হাজার টাকা কর ছাড় পাবেন । যা ওই করদাতা একবারই পাবেন। এতে করদাতারা ঘরে বসেই অনলাইন রিটার্ন দিতে উৎসাহিত হবেন।

তিনি জানান, নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি সমূহের আয় তিন বছর করমুক্ত রাখা হলে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে । এতে পুঁজিবাজারে গুণগত মানসম্পন্ন শেয়ারের যোগান বাড়বে যা বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে ভূমিকা পালন করবে ।

দাবির মধ্যে আরো রয়েছে, এডিবি ও সরকারের মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তির হিসেবে প্রণীত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছি। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সরকারও আমাদের সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করে আসছে।

বর্তমানে সিএসই ক্রমহ্রাসমান হারে আয়কর প্রদান করে, যা এই অর্থবছরে শেষ হবে । এক্সচেঞ্জ ডিমিঊচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের শতকরা পঁচিশ ভাগ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর নিকট বিক্রয় করতে হবে। সিএসই এখনো আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ করতে পারেনি । কৌশলগত বিনিয়োগকারীর নিকট শেয়ার বিক্রয়ের জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যহতির সুবিধা দেয়া হলে ডিমিঊচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী পেতে সহায়ক হবে এবং একই সাথে তুলনামূলক ছোট এক্সচেঞ্জ হিসেবে দেশের পুঁজিবাজারে যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে ।

এছাড়া আরও বলা হয়েছে, স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কর্তনের হার পুনঃ নির্ধারনের জন্য বারংবার অনুরোধ সত্বেও
এই হার পূর্ববর্তী ০.০৫% বহাল রাখা হয়েছে। অধিকানশ ব্রোকার হাউজ বর্তমানে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত হওয়া সত্বেও এসকল ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে বর্ধমান হারে কর আদায় আয়করের মৌলিক নীতিরও পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কর্তনের হার ২০০৬ সালে চালুকৃত হারে অর্থাৎ ০.০১৫% এ পুনঃনির্ধারনের্ব জোর দাবী জানাচ্ছি।

সর্বশেষ দাবি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগ আগ্রহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বর্তমানে মূলধনী লাভের উপর কর হার ১০% থেকে কমিয়ে ৭.৫০% নির্ধারণ করা। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্তের প্রাক্কালে আমাদের বক্তব্যগুলো পুনঃবিবেচনা এবং অর্ন্তভুক্ত করা হবে ।

বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ নভেল করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা শিরোনামে যে বাজেট অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত প্রজ্ঞা এবং সাহসের সাথে উপস্থাপন করেছেন তার জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি বলে জানান আসিফ ইব্রাহিম।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *