পাচারকৃত ও কালো টাকা বিনিয়োগে আনার দাবি

new takaস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

কর দেওয়ায় পিছিয়ে থাকলেও মুদ্রা পাচার আর কালো টাকার পাহাড় গড়ায় এগিয়ে বাংলাদেশের কতিপয় বিত্তশালী। কর্মসংস্থাননির্ভর বিনিয়োগে পিছিয়ে থাকলেও তাঁদের অনেকেই অবৈধ আয়ের বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। অর্থনীতি বিনিয়োগ-খরায় থাকলেও কিংবা মহামারি দুর্বিপাকে সরকার তহবিল সংকটে মানুষের জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেলেও মুদ্রা পাচারকারীচক্র বা কালো টাকার মালিকরা ঠিকই জীবন কাটাচ্ছেন আয়েশে। তবে করোনার অভিঘাত মোকাবেলায় সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ সংস্থানে পাচারের অর্থ এবং বিপুল অঙ্কের কালো টাকা সহজ শর্তে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হচ্ছে।

উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের অর্থের চাহিদা পূরণে ওই সব খাতের টাকা অর্থনীতিতে নিয়ে আসার এখনই উপযুক্ত সময়। তাঁদের মতে, রাজস্ব আয়ের নাজুক অবস্থাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারের ধারদেনার প্রেক্ষাপটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা, অপ্রদর্শিত অর্থ এবং বিদেশে পাচার করা টাকা মূলধারায় বিনিয়োগের সুযোগ দিলে বিপুল অঙ্কের টাকা অর্থনীতিতে যোগ হবে। সরকারকে ধারকর্যের জন্য বিদেশে হাত পাততে হবে না আবার শিল্প ও সেবা খাতও চাঙ্গা হবে। করোনার কারণে সরকারের সামনে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ, তা মোকাবেলা করা, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখাই হলো অগ্রাধিকার। প্রয়োজনে কর ছাড় দিয়ে হলেও এসব অর্থ বিনিয়োগে আনতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি বা জিএফআইয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত আগের ১১ বছরে বাংলাদেশ থেকে মোট আট হাজার ১৭৫ কোটি ডলার বা সাড়ে ছয় লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার বা প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটি তাদের ২০১৭ সাল পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই গ্লোবাল রিপোর্ট প্রকাশ করলেও ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশের কোনো তথ্য তারা পায়নি। তবে ধারণা করা হয়, গড়ে বছরে প্রায় ৬৫১ কোটি ডলার বা ৫৫ হাজার কোটি টাকা করে অর্থ পাচার হয়েছে। তাহলে ওই অঙ্ক বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা; যে টাকা দিয়ে বাংলাদেশের দুই অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সংস্থাটির তখনকার হিসাবে মুদ্রা পাচারের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় স্থান দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। জিএফআই মনে করে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ১৯ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে।

জাতিসংঘ বিনিয়োগ সংস্থা আংকটাডের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যত টাকা কর আদায় হয়, তার অন্তত ৩৬ শতাংশের সমান টাকা বিদেশে পাচার হয়। মূলত আমদানি-রপ্তানির আড়ালেই এ পরিমাণ টাকা পাচার হয় বলে সংস্থাটি মনে করে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের তথ্যের ভিত্তিতে আংকটাড এ প্রতিবেদন তৈরি করে। যেখানে দেখানো হয়, ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা পাচার হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, এসব টাকা মূলত কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাতে পাচার হয়েছে। এ টাকায় পাচারকারীরা ওই সব দেশে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি করে আয়েশি জীবন যাপন করছেন।

শুধু যে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে তা-ই নয়; অনেকে বিপুল অঙ্কের অবৈধ টাকা আয় করেন, অথচ কর দেন না। নানা উপায়ে ফাঁকি দেন। আয় গোপন করেন। বেনামে টাকা রাখেন। ব্যাংকের ভল্টে সোনাদানা বা ভিন্ন উপায়ে মজুদ রাখেন। যে টাকা কোনো বিনিয়োগে যায় না। বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, সোনা-গয়না বা বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যয় করেন। প্রশ্ন উঠবে এই ভয়ে এ টাকা শিল্প-কারখানা বা কর্মসংস্থাননির্ভর খাতে বিনিয়োগ হয় না। ২০১৪ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের করা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ইকোনমি অব বাংলাদেশ : অ্যান ইকোনমেট্রিক অ্যানালিসিস’ শীর্ষক গবেষণায়ও বলা হয়, ২০১১ সালে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ৬০ শতাংশ কালো টাকার উপস্থিতি ছিল। যার পরিমাণ সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এটা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়েও বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, কালো টাকার অঙ্ক এখন আরো বেশি হবে।

টাকা পাচার ও অর্থনীতিতে কালো টাকার বিস্তার নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে জানা যায়, বাংলাদেশের এ চিত্র ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। বাণিজ্যের আড়ালে মুদ্রা পাচার যেমন ঠেকানো যাচ্ছে না, আবার বিপুল অঙ্কের কালো টাকাও অর্থনীতির মূলধারায় আনা যাচ্ছে না। সরকার বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা শর্ত সাপেক্ষে বিনিয়োগের সুযোগ দিলেও বাড়তি করের বোঝা আর অন্য আইনে শাস্তির বিধান থাকায় এ পথে অবৈধ অর্থের মালিকরা পা বাড়াননি।

রাজস্ব বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচার রোধ করা গেলে বা অর্থনীতিতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারত অর্থনীতি। বর্তমানে করোনার কারণে মানুষের জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে অর্থের সংস্থান করা সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সরকার প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। এ টাকা জোগাতে সরকারকে ব্যাংকসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সমন্বয় করতে হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দিয়ে তহবিল জুগিয়েছে। রাজস্ব আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না থাকা, সঞ্চয়পত্রে কড়াকড়ি আরোপে গ্রাহকের সাড়া না পাওয়া, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় সরকার টাকা জোগাতে বিদেশি উন্নয়ন সংস্থার কাছে ধরনা দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কতটা সহায়তা পাওয়া যাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে করোনা আরো দীর্ঘায়িত হলে সরকারের সামনে আরো বিপুল অঙ্কের অর্থের চাহিদা তৈরি হবে, যা মেটানো কঠিন হবে। অনেকে টাকা ছাপিয়ে সংকট মোকাবেলার কথা বললেও বিভিন্ন মহল থেকে এ বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। কৃত্রিমভাবে টাকার সংস্থান করলে মূল্যস্ফীতি বাড়াসহ আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদরা। তাই এখন কালো টাকা ও পাচারের অর্থ অর্থনীতিতে ফেরাতে বিশেষ করছাড় দিয়ে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। কেউ বলছেন, আইন করে শাস্তির বিধান করে বিদেশ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনা যাবে না। আর তা জটিল প্রক্রিয়া। তাঁরা মনে করেন, এখন সারা বিশ্বে করোনার বিস্তারে পাচারকারীরা আতঙ্কে আছেন।

যাঁরা বিলাসী জীবনের খোঁজে আমেরিকা-কানাডা, সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় বাড়ি বানিয়েছিলেন, তাঁরাও আছেন মৃত্যু আতঙ্কে। উন্নত দেশে গিয়েও করোনার মহামারি থেকে বাঁচতে পারবেন এমন ভরসা নেই কারোর। তাই বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখন ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলে, কর ছাড় দিলে, কোনো প্রশ্ন না করলে অনেকেই টাকা ফিরিয়ে আনবেন।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের আসছে বাজেটে নানা খাতে বিনিয়োগ লাগবে। এ জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন। ব্যাংক খাত, বিদেশি ঋণ ও অনুদানে পুরোটার সংস্থান করা যাবে না। আবার রাজস্বও ঠিকমতো পাওয়া যাবে না। এ জন্য যা করতে পারে সরকার, তা হলো বিশেষ বন্ড চালু করতে পারে যেখানে সবাই অপ্রদর্শিত আয় ও কালো টাকা বিনিয়োগ করবে। অথবা সঞ্চয়পত্রের কড়াকড়ি শিথিল করবে। কাউকে প্রশ্ন না করে, শুধু ভোটার আইডি ও ছবি দিয়ে খুব সহজে যাতে সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

এনবিআরের সাবেক আয়কর নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, আসছে অর্থবছরে সরকার কর অবকাশ বা কর অব্যাহতি তুলে দিতে পারবে না। এতে শিল্প ও সেবা খাত দুর্বল হয়ে যাবে। এমনিতেই তাদের ব্যবসা নাজুক অবস্থায়। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেই অনেক সময় লাগবে। ফলে ধরে নেওয়া যায়, রাজস্ব আয় কম হবে। তখন সরকারকে ব্যয় মেটানোর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হবে তার বড় উৎস হতে পারে পাচারের টাকা, অপ্রদর্শিত আয় ও কালো টাকা বিনা প্রশ্নে মূলধারায় নিয়ে আসা। এখন সরকারের বিপুল অর্থের প্রয়োজন। টাকা ছাপিয়ে টাকার সংস্থান কোনো বাস্তবসম্মত উপায় নয়। এ নিয়ে নীতিনৈতিকার প্রশ্ন তুলবেন অনেকে। আমার মনে হয়, এখন এসব ভাবার সময় নেই। প্রতিটি দেশই তাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সম্ভব সব পদক্ষেপ নেবে। আগে টিকে থাকতে হবে। এ টাকা বিনিয়োগে আনতে আইনে সংশোধনী আনতে হবে। বলতে হবে, অন্য আইনে যাই থাকুক, এই বিনিয়োগের অর্থের উৎস নিয়ে দুদক বা অন্য সংস্থা প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

এ ব্যাপারে আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামীন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন এমন এক পরিস্থিতি যখন অর্থনীতি রীতিমতো স্থবির। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ানো। অলস অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে আনতে হবে। এ জন্য কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। সরকারের কোনো সংস্থাও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না। বিশেষ করছাড়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এ সুযোগ দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ কমবে। শিল্প-কারখানা, আবাসন, হাসপাতাল, টেক্সটাইল, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন খাতে যেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো, করছাড় এবং কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে প্রশ্ন না করার বিধান থাকতে হবে। অন্যথায় সুযোগ দিলেও তেমন কাজে আসবে না।

এনবিআর সূত্র জানায়, বর্তমান অর্থবছরে বিশেষ ক্ষেত্রে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিনিয়োগ করা যাবে। তবে নানা শর্তের কারণে এ সুযোগে তেমন সাড়া নেই বলে জানা যায়। এনবিআরের আয়কর বিভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বেশির ভাগ সময়ই নানা শর্তের কারণে অবৈধ টাকার মালিকরা তাতে সাড়া দেননি। ১৯৭৫ সালে সেনাশাসন আমলে সাদা হয় দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেনাশাসন ও বিএনপি আমলে সাদা হয় ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেনাশাসন ও জাতীয় পার্টির আমলে বৈধ হয় ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির আমলে বৈধ হয় ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসনামলে সাদা হয় ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি আমলে বৈধ হয় ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বৈধ হয় ৯ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমলে বৈধ হয় এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। আর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমলে বৈধ হয় ৮৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *