বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ মিউচুয়াল ফান্ডের পুনর্বিনিয়োগ

mutualনিজস্ব প্রতিবেদক :

মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে পুনর্বিনিয়োগ (রি-ইনভেস্টমেন্ট) পদ্ধতি অনুসরণ করেছে একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি। নিজেদের আয় বাড়াতে এ বছরও ১৩টি মিউচুয়াল ফান্ডের ঘোষিত লভ্যাংশে রি-ইনভেস্টমেন্টের ঘোষণা এসেছে। যা এখন প্রশ্নবিদ্ধ!

এক হিসাবে দেখা যায়, এই সব লভ্যাংশ নগদে দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীরা পেতেন ২৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু পুনর্বিনিয়োগ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ হিসেবে যে ইউনিট সার্টিফিকেট বিনিয়োগকারীরা পেতে যাচ্ছেন, তার বাজারমূল্য এখন ১২৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীরা ১২০ কোটি টাকা বেশি পেতেন। এ অবস্থায় মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ঠকছেন কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

গত বছরও এসব মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনায় থাকা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলো পুনর্বিনিয়োগ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ দিয়েছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)নির্দেশনা অনুযায়ী, যে পদ্ধতিতে লভ্যাংশ দিলে বিনিয়োগকারীরা সর্বাধিক লাভবান হন, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু বিএসইসির ওই নির্দেশনা অনুসরণ করেনি ট্রাস্টি বোর্ডগুলো।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুনর্বিনিয়োগের এ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইনেই রয়েছে। এ কারণে সংস্থাটির পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোও এর মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ড খাতটিকে সমস্যাগ্রস্ত করছে। বিনিয়োগকারীরা মুনাফা না পাওয়ায় ১০ টাকার ফান্ড সাড়ে ৩ টাকায়ও বিক্রি করছেন। এভাবে চলতে থাকলে ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ আরও কমে যাবে।

গত বছরে রি-ইনভেস্টমেন্ট লভ্যাংশ প্রদানকারী ফান্ডগুলো হলো – সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি রেস পরিচালিত প্রথম জনতা ব্যাংক, এবি ব্যাংক প্রথম, ইবিএল প্রথম, ইবিএল এনআরবি, এক্সিম ব্যাংক প্রথম, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, পিএইচপি প্রথম, পপুলার লাইফ প্রথম এবং ট্রাস্ট ব্যাংক প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড। এ ছাড়া এশিয়ান টাইগার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালিত এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ এবং এইমস বাংলাদেশ পরিচালিত এইমস প্রথম, গ্রামীণ ওয়ান স্কিম-১ ও স্কিম-২ ফান্ডের জন্য রি-ইনভেস্টমেন্ট আকারে লভ্যাংশ প্রদান করছে।

এ বছর তিন বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মোট ১৩ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের বিপরীতে বিভিন্ন হারে পুনঃবিনিয়োগ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করে।

এভাবে লভ্যাংশ প্রদান করায় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বোর্ডেকে দায়ী করে। বিএসইসির এক কর্মকর্তা জানান, এতে আইন লঙ্ঘন না হলেও নৈতিকতার প্রশ্ন জড়িত। সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলো তাদের ফি পেয়ে থাকে ফান্ডের আকারের ওপর। এ কারণে বেশি ফি পাওয়ার জন্য ফান্ডের আকার বাড়াতে রি-ইনভেস্টমেন্ট আকারে লভ্যাংশ প্রদান করেছে। তাতে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হলেন কি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, তা তারা বিবেচনাতেই নিচ্ছে না। এক্ষেত্রে ট্রাস্টি বিনিয়োগকারীদের পক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *