বিশ্ব শেয়ারবাজারে আরেক ‘কালো সোমবার’

world-smbdস্টকমার্কেট ডেস্ক :

বিশ্ব শেয়ারবাজারে বিশাল পতন হলো গতকাল। শুরু হয়েছিল চীন থেকে। আর সেই আতঙ্কেই ধস নামে এশিয়া ও ইউরোপসহ বিশ্ব শেয়ারবাজারে। কাকতালীয় হলেও গতকাল দিনটি ছিল সোমবার। ১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবর বিশ্ব শেয়ারবাজারে বড় ধস নেমেছিল। ওই দিনটিও ছিল সোমবার। বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো গতকালকের শেয়ারবাজারের ধসকে কালো সোমবার বা ‘ব্ল্যাক মানডে’ বলেই উল্লেখ করছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো হিসাব কষে দেখিয়েছে, গতকাল এক দিনে দেশটির শেয়ারবাজারের বাজারমূল্য ৫ হাজার ৬০০ কোটি পাউন্ড কমে গেছে। বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গের হিসাবে, গত ১০ দিনে বিশ্ব শেয়ারবাজার পাঁচ লাখ কোটি ডলারের বেশি বাজারদর হারিয়েছে।

গতকাল সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে চীনের শেয়ারবাজার। দেশটির অন্যতম প্রধান শেয়ারবাজার সাংহাই কম্পোজিট সূচক গতকাল এক ধাক্কায় সাড়ে ৮ শতাংশ কমে যায়। ২০০৭ সালের পর চীনের শেয়ারবাজারে এক দিনের ব্যবধানে এটি সর্বোচ্চ দরপতন। গত এক সপ্তাহে সাংহাই কম্পোজিটের সূচক কমেছে ১২ শতাংশ, আর মধ্য জুনের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত দুই মাসে এ সূচক কমেছে ৩০ শতাংশ।

হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকও গতকাল পড়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৪০ ডলারে নেমে আসা, চীনের অর্থনীতির গতিমন্দা এ ধসকে ত্বরান্বিত করেছে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস ও জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের শেয়ারবাজারেও গতকাল সূচকের বড় দরপতন ঘটেছে। দিনের শুরুতেই লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে থাকে। একইভাবে প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টের বাজারে সূচক প্রায় ৩ শতাংশ কমে যায়।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, শেয়ারবাজারের অবস্থা সামনের দিনগুলোতে আরও খারাপ হবে। আর অনিশ্চিত বিনিয়োগ পরিস্থিতি এর অন্যতম কারণ। বিপর্যয় ঠেকাতে চীন সরকার পেনশন ফান্ডের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে—এ ঘোষণা দিয়েও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারেনি। রপ্তানি বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময়মূল্য কমিয়েছে।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় শেয়ারবাজার জাপানেও গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে গতকাল। নিক্কেই ২২৫ সূচক গতকাল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ১৮ হাজার ৫৪০ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

বাদ যায়নি অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারও। অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সূচক গতকাল কমেছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক কমেছে আড়াই শতাংশ।

ধস নেমেছে ভারতের শেয়ারবাজারেও। গতকাল দেশটির প্রধান দুটি শেয়ারবাজার সূচক সেনসেক্স ও নিফটির সূচক দিন শেষে ৬ শতাংশের বেশি কমে যায়। গত সাত বছরে ভারতের শেয়ারবাজারে এক দিনের ব্যবধানে এটি সর্বোচ্চ দরপতন। একই সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময়মূল্যও কমে গেছে ভারতে। গতকাল এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার বিনিময়মূল্য ৬৬ দশমিক ৬৪ রুপিতে নেমে আসে। এক দিন আগে বিনিময়মূল্য ছিল ৬৫ দশমিক ৮৩ রুপি। ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট রুপির বিনিময়মূল্য সর্বনিম্ন ৬৮ দশমিক ৮০ ডলারে নেমে গিয়েছিল।

ভারতের মুদ্রা বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময়মূল্য কমার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রুপির ওপর। এ ছাড়া আমদানিকারকদের ডলারের অতিরিক্ত চাহিদা, শেয়ারবাজারের ব্যাপক ক্ষতি রুপির বিনিময়মূল্য কমাতে ভূমিকা রেখেছে।

সূত্র: বিবিসি, ব্লুমবার্গ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *