শেয়ারবাজারের পরিবর্তন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এড়ায়নি

DSE-SMBDনিজস্ব প্রতিবেদক :

বর্তমান সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের শেয়ারবাজারকে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের শেয়ারবাজারের কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এড়ায়নি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার কাঠামোগত সক্ষমতার বিবেচনায় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট কনফারেন্স, ২০১৫-এর আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত সম্মেলনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ অগ্রগতি টেকসই করতে শিল্প পুঁজির ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তাদের জন্য পুঁজিবাজারই মূলধন সংগ্রহের সবচেয়ে ভালো উৎস।
একটি খাতের জন্য সবার আগে প্রয়োজন শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এর পর দরকার কার্যকর আইন-কানুন। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিএসইসি যেমন শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি আইন-কানুন ও অবকাঠামোগত সক্ষমতায়ও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এর স্বীকৃতি মিলছে। বিএসইসি বিশ্বের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনগুলোর সংঘ আইওএসসিওর এ ক্যাটাগরির সদস্য বিবেচিত হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা জানাচ্ছে।

চলমান পরিবর্তন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের শেয়ারবাজারকে নতুন উচ্চতায় দেখা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বলেন, বিএসইসি একটি পরিকল্পিত ফ্রেমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে শেয়ারবাজারের অবকাঠামোগত সক্ষমতা উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন নতুন প্রডাক্ট বাজারে আনার চেষ্টা চলছে।

তিনি আরো বলেন, টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্পায়ন গতিশীল করা আবশ্যক। আর উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে মূলধন জোগানোর সবচেয়ে ভালো উৎস শেয়ারবাজার। এ বাজারের উন্নয়ন হলে বিনিয়োগকারী-উদ্যোক্তা সবাই লাভবান হবেন।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা, এফসিএমএ। ডিমিউচুয়ালাইজেশন-পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে।

তালিকাভুক্তির বিভিন্ন সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো করসহ অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। মূলধনের খরচ ও কর কমে আসায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে একটি কোম্পানির মুনাফার পাশাপাশি তা অর্জনের সক্ষমতাও বাড়ে।

মূল প্রবন্ধে তিনি জানান, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে মোট ৩৪টি কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়েছে। একেকটি কোম্পানি উত্তোলিত গড় মূলধন বিবেচনায় ডিএসই ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকেও (বিএসই) ছাড়িয়ে গেছে।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই দেশের শেয়ারবাজারে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) ও তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালুর ব্যাপারে আশাবাদী স্টক এক্সচেঞ্জটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বিভিন্ন ডেরিভেটিভের পাশাপাশি উন্নত বাজারগুলোর আদলে আগামীতে আইনসিদ্ধ শর্টসেল চালুরও পরিকল্পনা আছে ডিএসইর।

বিএসইসির কমিশনার আরিফ খান তার বক্তব্যে বলেন, রেগুলেটরি ইস্যুগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্যাটার্নও বদলে গেছে। দেশী-বিদেশী পেশাদার তহবিল ব্যবস্থাপকরাও বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন। আমাদের শেয়ারবাজার এখন নিছক প্রতিদিন কেনাবেচার বাজার নেই। গত কয়েক বছরে নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ৫০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া দেশের শেয়ারবাজারে এখন প্রতিদিন গড়ে ৫-১০ কোটি ডলারের সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়, যা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক ধনী দেশের স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়েও বেশি। বৈশ্বিক তহবিলগুলোর চোখে বাংলাদেশ অন্যান্য প্রান্তিক বাজারকে ছাড়িয়ে গেছে।

গত পাঁচ বছরে বিএসইসির নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আরিফ খান বলেন, নানা দুর্বলতায় ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে একটি বড় দরপতন হয়। বর্তমান কমিশন সেসব দুর্বলতা কাটানোর লক্ষ্যে খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয়কে বিবেচনায় নিচ্ছে। মূলধন ইস্যু, তালিকাভুক্তি ও কোম্পানিতে সুশাসন জোরদার, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো, অপরাধের শাস্তি ইত্যাদি পরিবর্তন বিদেশীদের চোখ এড়াচ্ছে না। ইউনিলিভার, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডসহ বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বাংলাদেশের বাজার অনেক আকর্ষণীয়।

অর্থনীতিবিদরাও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করছেন। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারলে কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ডলার স্পর্শ করবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি উল মারূফ মতিনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে তিনটি টেকনিক্যাল সেশন পরিচালিত হয়। প্রথম সেশনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মিউচুয়াল ফান্ড, দ্বিতীয় সেশনে ঋণ-সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ এবং শেষ সেশনে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টরা।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/বিএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *