শেয়ার ছেড়ে দিলেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারও

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসে। তখন ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন মুস্তাফা আনোয়ার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আবদুল মান্নান। মুস্তাফা আনোয়ার ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, ছিলেন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীও।

মালিকানা পরিবর্তনের পর ইবনে সিনা ট্রাস্ট ব্যাংকটির সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়। আর মালিকানা পরিবর্তনের ছয় বছর পর এসে মুস্তাফা আনোয়ার ব্যাংকটির প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে তিনি তাঁর হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দেন।

ইসলামী ব্যাংক সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) জানিয়েছে, গত আগস্টে মুস্তাফা আনোয়ারের শেয়ার ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৩২টি। গত সেপ্টেম্বরে তাঁর শেয়ার কমে হয়েছে ৩৩২টি। অর্থাৎ এক মাসে তিনি তাঁর হাতে থাকা ২ লাখ ২৬ হাজার শেয়ার বিক্রি করে দেন। যার মাধ্যমে মূলত মুস্তাফা আনোয়ার ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গুটিয়ে আনছেন।

ইসলামী ব্যাংক আরও জানিয়েছে, গত জুলাইয়ে ইউনিগ্লোব বিজনেস রিসোর্সের হাতে ব্যাংকটির শেয়ার ছিল প্রায় ৭ কোটি ৫২ লাখ, আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ২২ লাখে। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ব্যাংকটির ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির হাতে। ইসলামী ব্যাংকে ইউনিগ্লোবের পক্ষে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন আবদুল মতিন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জামায়াতমুক্ত করতে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্ত করা শুরু হয় ২০১৬ সালের জুন থেকে। ওই বছরের ২ জুন ব্যাংকটির ৩৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি নতুন নতুন কোম্পানি তৈরি করে শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকটির শেয়ার কিনে নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক একটি কোম্পানি। এসব কোম্পানির পক্ষে ব্যাংকটিতে বসানো হয় পরিচালক। বর্তমানে ব্যাংকটির বেশির ভাগ পরিচালক চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি।

মালিকানা বদলের পর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সাবেক সচিব আরস্তু খানকে, তিনি এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আরমাডা স্পিনিং মিলের পক্ষে নিযুক্ত পরিচালক ছিলেন। ব্যাংকটির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মানতে না পারায় তিনি পদত্যাগ করেন। পরে একই প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষক নাজমুল হাসানকে।

জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২০১১ সাল পর্যন্ত একরকম নির্বিঘ্নে ব্যাংকটি পরিচালনা করে আসছিল। ২০১১ সালের নভেম্বরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নতুন নিয়ম করে, তালিকাভুক্ত কোনো পরিচালক হতে হলে ওই পরিচালকের হাতে কোম্পানিটির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। এ বিধান করার পর ব্যাংকটিতে জামায়াতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যে কিছুটা ভাটা পড়ে। আর ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০১৭ সালে শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপ। এরপর ব্যাংকটিতে ঋণ অনিয়মের নানা ঘটনা শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *