শেয়ারবাজারে ২০১০ সালের বড় বিপর্যয়ের পর গত ৫ বছরে প্রণোদনার জোয়ার এসেছে। এরপরও অজ্ঞাত কারণে সংকট কাটছে না। বিভিন্ন সুবিধা আদায়ে অসাধু চক্র সক্রিয় থাকায় কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বাজারের উন্নয়নের পরিবর্তে দুর্বল কোম্পানির আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার) অনুমোদন দিয়ে সংকট বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
জানা গেছে, একটি প্রণোদনার পর কয়েক দিন সূচক বাড়ে। এরপর টানা পতন শুরু হয়। শুরু হয় নতুন বায়না। এভাবেই গত ৫ বছর চলেছে দেশের শেয়ারবাজার।
যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা আস্থার সংকট। তবে কেউ কেউ বলছেন পুরাতন খেলোয়াড়রা বাজারে সক্রিয়। নেপথ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে বাজার। তাদের মতে, এ অবস্থার উত্তরণে কৃত্রিমভাবে সূচক না বাড়িয়ে বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত।
প্রণোদনা :
বিপর্যয়ের পর ২০১১ সালেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের ওপর কর দিতে হতো। স্টক এক্সচেঞ্জের দাবির কারণে ধাপে ধাপে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এ পরিমাণ লভ্যাংশ পেলে তা আয়করমুক্ত। এছাড়া ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ বছর কর অবকাশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম বছরে শতভাগ করমুক্ত। এছাড়া কোনো কোম্পানি বা অংশীদারি ফার্ম পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ হতে যে টাকা মুনাফা করে, তার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হতো। বর্তমানে তা করমুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করলে উৎসে কর দিতে হবে না।
সুদ মওকুফ : মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসসহ সংশ্লিষ্ট ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবের ৫০ শতাংশ সুদ মওকুফ করতে পারবে। বাকি ৫০ শতাংশ সুদ ব্লক অ্যাকাউন্টে রেখে তিন বছরে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আইপিওতে বিশেষ কোটা :
২০১২ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সব কোম্পানির আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ কোটা দেয়া হয়েছে।
তহবিল গঠন :
বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় ৯শ’ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এ তহবিলের মেয়াদ শেষ হবে। এটি বিতরণের দায়িত্ব রয়েছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এই তহবিল থেকে এরই মধ্যে ৩৪টি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক ৬৩৫ কোটি টাকা নিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৫ হাজার।
প্রভিশন সুবিধা :
ব্রোকারেজ হাউসের পুনর্মূল্যায়নজনিত ক্ষতির বিপরীতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ প্রভিশন সুবিধা দেয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নেতিবাচক ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত নেতিবাচক হলেও একসঙ্গে প্রভিশনিং করতে হবে না। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৫টি সমান কিস্তিতে তা সংরক্ষণ করা যাবে।
ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয় :
ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন আনায় অতিরিক্ত বিনিয়োগ নিয়ে সমস্যায় পড়ে ব্যাংক। ফলে বাজারে টানা দরপতন শুরু হয়। বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, অল্প সময়ে বিনিয়োগ সমন্বয়ের চাপ থাকায় বাজার নেতিবাচক হচ্ছে। এ দাবির কারণে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কর কমানো :
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করের হার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
কালো টাকা বিনিয়োগ : আয়কর অধ্যাদেশ সংশোধন করে স্থায়ীভাবে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে নির্ধারিত করের পর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যায়।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এলকে