এমএলএমের নামে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে হাসপাতাল বানান

99999999999স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানে ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাহেদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩২টি মামলা হয়েছে। কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) এবং ‘বিডিএস ক্লিক ওয়ান’ নামে এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) কম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খাটেন সাহেদ।

জেল থেকে বেরিয়ে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় রিজেন্ট গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে পাল্টে যান তিনি। নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মিশনে নামেন তিনি। বিভিন্ন পরিচয়ে ধামাচাপা দেন অনেক অভিযোগ। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা খুলে এবং কয়েকটি টিভির টক শোতে অংশ নিয়ে নিজেকে বড় সাংবাদিক বলে পরিচয়ও দিতে থাকেন।

গত দুই দিন ধরে র‌্যাবের অভিযান চলাকালে রিজেন্ট হাসপাতাল ভবনের মালিক জাহানারা কবির অভিযোগ করেন, চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ভবনের ভাড়াও দিচ্ছে না, চুক্তি নবায়ন করছে না রিজেন্ট। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে হুমকি দেওয়া হতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নামে। ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও সাহস পাচ্ছিলেন না তিনি।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিপ্তরের স্টিকার লাগানো ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের চোখে ধুলো দিতেই ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টিকার ব্যবহার করা হতো।

২০১১ সালে ‘বিডিএস ক্লিক ওয়ান’ নামে অনলাইনে স্কাইল্যান্সারের মাধ্যমে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার সময় গ্রাহকরা তাঁকে মেজর ইফতেখার করিম নামে চিনত। ‘বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে’ চাকরির নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। তদন্তের সূত্রে জানা যায়, আগে তাঁর নাম ছিল সাহেদ করিম।

রিজেন্ট গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর মো. সাহেদ হয়ে যায়। মিডিয়ায় তাঁকে সবাই মো. সাহেদ নামেই চেনে। বিএনপির নেতা পরিচয়ে ২০০৭ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমোদন নেন সাহেদ। হাওয়া ভবনে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর। কয়েক বছর ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সম্পর্ক হয় তাঁর। তিনি এখন আওয়ামী লীগের সদস্য।

তদন্তকারীরা বলছেন, এভাবে ভুয়া পরিচয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক করে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দলের নেতার পরিচয়ে সাহেদ অনেক অপকর্ম ধামাচাপা দিয়েছেন। করোনার সময় মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সরকার ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এর আগে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি তাঁর রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কয়েক বছর আগে মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর ঘটনায় সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় যখন তদন্তকারীরা তাঁকে খুজে পাচ্ছিলেন না বলে জানান, তখন পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাহেদকে দেখেন এ প্রতিবেদকসহ জাতীয় দৈনিকের দুজন অপরাধবিষয়ক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। ওই সময় পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় সংবাদ পরিবেশন করা না গেলেও খোঁজ নিয়ে সাহেদের কিছু অপকর্মের প্রাথমিক তথ্য মেলে। গতকাল কালের কণ্ঠ’র হাতে সাহেদের বিরুদ্ধে পরিচয় জালিয়াতির ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের পাঁচটি নথি এসেছে। সূত্র : কালের কন্ঠ

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *