পোশাক খাতের প্রস্তাবের প্রতিফলন নেই বাজেটে: বিজিএমইএ

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি জাতীয় বাজেটে। তবে এ খাতের আগের বিভিন্ন প্রণোদনা ও কর সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা ইতিবাচক। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বিজিএমইএ এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

এবারের বাজেট সামনে রেখে বিজিএমইএর অন্যতম দাবি ছিল, কৃত্রিম তন্তু দিয়ে উৎপাদিত পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া এবং উৎসে কর শতকরা ৫০ পয়সা হারে পাঁচ বছর অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সহায়তায় সরকারের দেওয়া রপ্তানি প্রণোদনার আওতা এক কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়ানো। এখন বছরে ৫০ লাখ ডলারের কম রপ্তানি করা কারখানা এ সুবিধা পাচ্ছে।

বিজিএমইএ বলেছে, বাজেটে পোশাক খাতে রপ্তানি প্রণোদনা এবং উৎসে কর কর্তনের হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ অব্যাহত রাখা হয়েছে। তারা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে তারা পাঁচ বছরের জন্য একই হারে থাকার ঘোষণা চান। কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন, ভ্যাট আইনে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৪ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ ব্যবসা-সহায়ক পদক্ষেপের জন্য বাজেটের প্রশংসা করেছে বিজিএমইএ। তবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক খাতের ঘুরে দাঁড়ানো এবং চাকরি হারানো শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তা যথেষ্ট নয়।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি শহীদুল্লাজ আজিম, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, মিরান আলী, মো. নাছির উদ্দিন, রাকিবুল আলম চৌধুরী ও অন্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

কৃত্রিম তন্তুর পোশাকে প্রণোদনার দাবি ব্যাখ্যায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চার দশক ধরে রপ্তানি করলেও পোশাকপণ্যে বৈচিত্র্য আসেনি। আমাদের দেশ থেকে পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশই তুলায় তৈরি। ১০ বছর আগে এ হার ছিল ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ তুলা নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। অথচ বিশ্ববাজার চাহিদার ৭৫ শতাংশই কৃত্রিম তন্তুর। এ ধরনের পণ্যের চাহিদা বছরে ৩ থেকে ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। কৃত্রিম তন্তুর আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ৫ শতাংশ। প্রতিযোগী ভিয়েতনামের এ হার দ্বিগুণ। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলোর কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের নিজস্ব কাঁচামাল পেট্রোকেমিক্যাল চিপস নিজস্ব। এ সুবিধায় প্রতিযোগিতায় তারা এগিয়ে আছে। এ বাস্তবতায় কৃত্রিম তন্তুর বিনিয়োগ ও রপ্তানি উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দাবি করেছেন তারা। ফারুক হাসান বলেন, এতে বেশি রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। সার্বিকভাবে দেশ উপকৃত হবে।

ফারুক হাসান বলেন, বাজেট পাসের আগে বিজিএমইএর দাবিগুলো বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো আবারও তুলে ধরা হয়। বিজিএমইএর অন্য প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে- করোনাকালে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ সরকারের দেওয়া ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর কর্তন প্রত্যাহার এবং প্রচলিত বাজারে রপ্তানি প্রণোদনা ৪ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করা। শ্রমিক এবং মিডলেভেল ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে দক্ষতা উন্নয়নে নির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখাও তাদের দাবি ছিল। শিল্পের বাইরে শ্রমিকদের কল্যাণেও একগুচ্ছ প্রস্তাব ছিল বিজিএমইএর। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন ও পরিবহনের ব্যবস্থা করা এবং সব শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য করোনার টিকার ব্যবস্থা করা।

বাজেটে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি মনে করেন, করোনার দুর্যোগকালে এ লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত বেশি। চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসের রপ্তানি আয় কভিডের আগে স্বাভাবিক সময় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় এখনও ১০ শতাংশ কম। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *