মামলা চলবে কিনা আজও জানতে পারেনি বাংলাদেশ

স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ শুক্রবার। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে খোয়া যায় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। পরে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন স্বেচ্ছায় ফেরত দেয় সাড়ে ৩ কোটি ডলার। এর বাইরে আর কোনো অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশ। অর্থ ফেরত ও দোষীদের চিহ্নিত করতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। কিন্তু সেই মামলা চলবে কিনা তিন বছরেও সেই রায় পাওয়া যায়নি। আবার ফিলিপাইনে চলমান ১২টি মামলারও রায় হয়নি। রিজার্ভ চুরির অর্ধযুগে বাংলাদেশের অর্জন যেন শুধু এসব মামলা।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, উদ্ধার না হওয়া ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা) আদৌ পাওয়া যাবে, সে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো পদ্ধতি হ্যাক করে আন্তর্জাতিক বার্তা প্রেরণের নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ডলার নেওয়া হয় ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে নেওয়া দুই কোটি ডলার ওই সময়ই ফেরত দেয় দেশটি। আর ফিলিপাইনে নেওয়া অর্থের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেয়।

সংশ্নিষ্টরা জানান, মামলার বাইরেও সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে সফল হয়নি বাংলাদেশ। তাই ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটান সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ফিলিপাইনের আরসিবিসি, কিম অংসহ বিভিন্ন পক্ষের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়। তবে ফিলিপাইনের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে ম্যানহাটান সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট জানিয়ে দেয়, মামলাটি তাদের কোর্টের এখতিয়ারাধীন নয়। তারা মামলাটি দেশটির স্টেট কোর্টে স্থানান্তরের পরামর্শ দেয়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টেও ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলাটি না চালানোর আবেদন জানিয়েছে আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের পক্ষগুলো। এ কারণে সেখানে মামলা চলবে কিনা সে বিষয়ে দু’পক্ষের শুনানি করেছে স্টেট কোর্ট। আগামী মার্চ বা এপ্রিলে এ মামলায় রায় হতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছেন আইনজীবী।
একজন কর্মকর্তা জানান, মামলা চলার পক্ষে রায় এলেও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার সব শেষে বাংলাদেশের পক্ষে রায় এলেও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায় ফিলিপাইন ফেরত দেবে কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, কোনো একটি ঘটনা ঘটলে শুরুতে মন্ত্রী, আমলা সবাই হৈচৈ করে থেমে যান। এটা করলে অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চালিয়ে নিতে হবে। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন দেশটির রিজাল ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরি করে সে চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, একবার অর্থ বের হয়ে গেলে তা উদ্ধার করা অনেক কষ্টসাধ্য। আবার সিআইডিও আজ পর্যন্ত রিপোর্ট দিতে পারল না। এটি করা গেলে অন্যদের ওপর চাপ তৈরি করা সহজ হতো।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা ফাঁসের পর তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন। আর দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অব্যাহতি দেয় সরকার। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির রিপোর্টে দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি উঠে আসে। যদিও প্রত্যক্ষভাবে কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। এ ঘটনায় ওই সময়ই মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কয়েক দফা সময় নিয়েছে। অবশ্য রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানাজানির পর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ফিলিপাইনের আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে এলে আরও অন্তত ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ফেরত পাওয়ার জোর আশা রয়েছে। এই অর্থ কিম অংয়ের মালিকানাধীন সোলায়ের ক্যাসিনোর অ্যাকাউন্টে ফ্রিজ আছে। সোলায়ের ক্যাসিনো এর মধ্যে ২২ লাখ ডলার ফেরত দিতে চাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ দাবি করছে ফ্রিজ করা পুরো অর্থ। ফ্রিজ করা পুরো অর্থ বাংলাদেশ পাবে নাকি আংশিক পাবে বিষয়টি এখন ফিলিপাইনের উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বাকি অর্থের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরির অর্থ ভাঙিয়ে দেওয়ার অপরাধে লাইসেন্স বাতিল হওয়া ফিলিপাইনের মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের অ্যাকাউন্টে ফ্রিজ রয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার। কিম অংয়ের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন এমন দু’জনের অ্যাকাউন্টে জব্দ আছে ১২ লাখ ডলার। আর কিম অংয়ের কাছে নগদে আছে দেড় কোটি ডলারের বেশি। যদিও কিম অং শুরু থেকে দাবি করে আসছেন জুয়াড়িরা ক্যাসিনোতে চিপস কিনে জুয়া খেলে ওই অর্থ জিতে নিয়ে গেছে। এর বাইরে ১৪ মিলিয়ন ডলারের হদিস পাওয়া যায়নি। সূত্র : সমকাল

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *