যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী চীন

স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

আর্থিক সংকট, মহামারিসহ নানা দুর্যোগ পেরিয়ে দ্রুত বড় হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। তাতে দরিদ্রদের খুব বেশি লাভ না হলেও পকেট ভারী হচ্ছে ধনীদের। গত দুই দশকে বিশ্বের সম্পদ বেড়েছে তিন গুণ। আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছে চীন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী এখন চীন। তবে বিশ্বের বেশির ভাগ সম্পদ মাত্র ১০ শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে কেন্দ্রীভূত।

৬০ শতাংশের বেশি বৈশ্বিক আয়ের প্রতিনিধিত্বকারী ১০টি দেশের জাতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে অ্যান্ড কম্পানির গবেষণা শাখার নতুন এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

গত সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বের নিট সম্পদ বেড়ে অভাবনীয়ভাবে ৫১৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যেখানে ২০০০ সালে বিশ্বের সম্পদ ছিল ১৫৬ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সম্পদ বেড়েছে তিন গুণ। আর এতে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় শেয়ার চীনের। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আয় এসেছে এই দেশটি থেকে। জুরিখে ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের অংশীদার জেন মিশকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমরা এখন বেশি ধনী।’

‘দ্য রাইজ অব দ্য গ্লোবাল ব্যালান্সশিট : হাউ প্রডাক্টিভলি আর ইউজিং আওয়ার ওয়েলথ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে গত দুই দশকের বিশ্ব অর্থনীতির বিকাশের ওপর গভীর দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। কিভাবে আর্থিক সংকট, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ এবং করোনা মহামারির ছোবলসহ নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি এই উচ্চতায় এসেছে।

তবে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বিশ্বের সম্পদ যে হারে বাড়ছে তা কতটা উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার হচ্ছে। কারণ বিশ্ব সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ রিয়েল এস্টেট খাতে পুঞ্জীভূত। বলা হয়, বৈশ্বিক নিট সম্পদের ৬৮ শতাংশই রিয়েল এস্টেট খাতের সঙ্গে যুক্ত। বাকি সম্পদ রয়েছে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, অবকাঠামো, পেটেন্ট ও বুদ্ধিবৃত্তিক খাত ইত্যাদিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে চীনের সম্পদ সবাইকে ছাড়িয়ে ১২০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। অথচ ২০০০ সালের দিকেও এই সম্পদ ছিল মাত্র সাত ট্রিলিয়ন ডলার। চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই সম্পদ বাড়তে থাকে ব্যাপকভাবে, যা তাকে আজকের সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৯০ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটিতে এই সময়ে নীরবে বেড়েছে সম্পত্তির মূল্য।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী এখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই দেশের দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ শীর্ষ ১০ শতাংশ পরিবারের হাতে। বিশ্বের বেশির ভাগ সম্পদও এই পরিবারগুলোর হাতে। এই বিত্তবানরা ক্রমাগত শুধু সম্পদের মালিকই হচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের হিসাবে আমেরিকার মোট সম্পদের ৭১ শতাংশ ১০ শতাংশ পরিবারের হাতে। আর নিম্নভাগের ৫০ শতাংশ পরিবারের সম্পদ কমে হয়েছে মাত্র ১.৫ শতাংশ। চীনেও একই চিত্র। ২০১৫ সালের হিসাবে দেশটির ৬৭ শতাংশ সম্পদের মালিক শীর্ষ ১০ শতাংশ পরিবার। নিম্নবর্তী ৫০ শতাংশ পরিবারের হাতে রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ সম্পদ।

২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো যথাক্রমে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মেক্সিকো ও সুইডেন। এই ১০টি দেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ৬৬ হাজার ডলার।

ম্যাককিনসের মতে, গত দুই দশকে সম্পদের এই ঊর্ধ্বগতি বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে। আয়ের তুলনায় সম্পদের দাম তাদের দীর্ঘমেয়াদি গড়ের চেয়েও প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি বেড়েছে। তাই সম্পদের এমন বৃদ্ধির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

বলা হয়, ভূ-সম্পত্তির মূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেকের জন্যই বাড়ির মালিক হওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাড়াচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটের ঝুঁকিও। যেমনটা দেখা গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সালে। ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ঘিরে চীনও এ ধরনের সমস্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি এক ডলার নেট নতুন বিনিয়োগে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় দুই ডলার নেট ঋণ তৈরি করে। বৈশ্বিক সম্পদ যদি বৈশ্বিক জিডিপি বাড়াতে আরো বেশি উৎপাদনশীল বিনিয়োগের পথ বের করতে পারে, তাহলেই পরিস্থিতি ভালো হতে পারে। আর সবচেয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি হবে তখন, যখন সম্পদ মূল্য পড়ে যাবে, যা বৈশ্বিক সম্পদের এক-তৃতীয়াংশকে নেই করে দিতে পারে।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *