যুবক, ডেসটিনি থেকে ইভ্যালি – গ্রাহকদের টাকার খবর কী?

স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

ফেনীর বাসিন্দা মারজান কনক ২০০৫ সালে যুবক নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বেশি লাভের আশায়।

প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। যুবকের তরফ থেকে তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল বেশি মুনাফা এবং জমি দেয়া হবে। সে আশায় তিনি আরো টাকা বিনিয়োগ করেন।

এক পর্যায়ে দেখেন কোম্পানির লোকজনের আর কোর খবর নেই।

মারজান কনক বলেন , ” প্রথমে আমি যখন ৫০ হাজার টাকা রাখি তখন আমাকে ২০ থেকে ২৫ পার্সেন্ট লাভ দিয়েছিল। এক বছর আমাকে ঠিক মতো টাকা দিছে। শেষ পর্যন্ত আমি এক লাখ টাকা রেখেছিলাম।”

দেড় দশক আগে বিতর্কিত মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং ব্যবসার নামে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যুবক। প্রতারণার অভিযোগে ২০০৬ সালে যুবকের কার্যক্রম ও বন্ধ করে দেয় সরকার।

যুবকে যারা টাকা দিয়েছেন তারা সেই টাকা আজও ফেরত পাননি। মারজান করকও সে টাকা ফেরত পাবার আশা করেন না।

ডেসটিনির জালিয়াতি

যুবকের মতোই প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে ডেসটিনি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

মানুষের কাছ থেকে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলায় ডেসটিনির শীর্ষ ব্যক্তিরা এখন কারাগারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুরু হয়েছে ই-কর্মাসের নামে নানা প্রতারণা। ই-ভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জ মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী র‍্যাব বলছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল জানিয়েছেন, গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবার কোন পরিকল্পনা তার নেই।

প্রতারণার অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও, যারা টাকা দিয়েছেন, তাদের টাকা ফেরতের উপায় কী?

টাকা ফেরত পাওয়া ‘অসম্ভব’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক নাজমা বেগম বলছেন, এসব অনিয়ম ও প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রথম থেকে ব্যবস্থা না নিলে মানুষের টাকা ফিরে পাওয়া রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠে।

“টাকা হান্ড্রেট পার্সেন্ট ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না, কোনভাবেই সম্ভব না। যখন ব্যাপারটা ঘটে যায় তখন কিছু করার থাকে না,” বলেন নাজমা বেগম।

তিনি বলেন, এসব কোম্পানির সম্পদের চেয়ে দেনার পরিমাণ অনেক বেশি। সেজন্য তাদের টাকা ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতাও নেই।

“আপনি তাদের ধরলেন, শাস্তি দিলেন। কিন্তু যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না।”

কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
গ্রাহকদের টাকার কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে এসব ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সে ব্যাপারে তাদের কোন দায় নেই। এজন্য অভিযুক্তদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, যুবক এবং ডেসটিনির বিষয়টি এখন আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

এছাড়া ইভ্যালির বিরুদ্ধে যেহেতু মামলা হয়েছে, টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সরকার কী ধরণের ভূমিকা রাখবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোনভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারবেন না। সূত্র : বিবিসি বাংলা

স্টকমার্কেটবিডি/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *