সাড়ে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে মার্চের মধ্যে

521219c027d95-onionস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

দেশে পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় আগামী মার্চ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, এরই মধ্যে দেশের পাঁচটি বড় শিল্প গ্রুপ আনবে এক লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ। অন্য ৩০০ থেকে ৪০০ ব্যবসায়ী মিলে আমদানি করবেন আরো চার লাখ টন। এ জন্য এরই মধ্যে তাঁদের আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমদানির জন্য অনুমতি নেওয়া এসব পেঁয়াজ আগামী মার্চের মধ্যে দেশের বাজারে ঢুকবে। এরই মধ্যে ভারতের পেঁয়াজ দেশে আসতে শুরু করেছে। মিয়ানমার থেকেও কিছু পেঁয়াজ এসেছে। তবে মিয়ানমার থেকে একটি বড় পেঁয়াজের চালান নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এটা করা গেলে দেশের চাহিদার আরো এক মাসের সমপরিমাণ পেঁয়াজের সংকট কাটবে। তুরস্ক, মিসর, চীন থেকেও পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত হঠাৎ পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় একই দিন সন্ধ্যায় এক লাফে ৫৬ থেকে ৭০ টাকায় ওঠে দেশি পেঁয়াজ। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ওঠে ৪২ টাকায়। প্রতি কেজিতে ১৪ টাকা করে বেড়ে যায়। এর দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। এর আগের বছরও ভারত প্রথমে ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের ন্যূনতম দর বেঁধে দেয়। পরে ১৭ দিনের মাথায় ৩০ সেপ্টেম্বর রপ্তানি নিষিদ্ধ করে দেয়। অন্যদিকে ভারতের বাজার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আসে। ওই বছর ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে পেঁয়াজের কেজি।

গতবারের প্রেক্ষাপটের অভিজ্ঞতা থাকলেও এবার কেন আগে থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি তা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে আমাদের খরচ হয় ২৬ টাকা আর মিসর থেকে ৪৩ টাকা। দামের বিশাল পার্থক্য থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা আগে থেকে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবেন না। এতে তাঁদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের মতো এবারও বড় পাঁচটি শিল্প গ্রুপকে আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে এস আলম, মেঘনা, সিটি, টিকে ও বিএসআরএম এলসি খুলছে। এস আলম গ্রুপ মোট এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির টার্গেট নিয়েছে। অন্য বড় গ্রুপগুলোও কাছাকাছি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করবে। বড় শিল্প গ্রুপের আমদানি করা পেঁয়াজ ভর্তুকি মূল্যে সারা দেশে বিক্রি করা হবে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ছোট ও মাঝারি মাপের তিন থেকে চারজন ব্যবসায়ী প্রায় চার লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন।

পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে টিপু মুনশি বলেন, দেশের পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ জন্য ভালো মানের বীজ এবং গ্রীস্মেও পেঁয়াজের ফলন হয় এমন পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে ই-কমার্সের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশে দাঁড়াতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ই-কমার্সের মাধ্যমে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিদিন ৫০০ কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করবে। প্রয়োজনে পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সারা বছর ধরে পেঁয়াজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশবন্ধু গ্রুপ নরসিংদীতে ৩৪ হাজার টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় এমন হিমাগার করছে।

বর্তমানে পেঁয়াজের মজুদ, চাহিদা আর ঘাটতি উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে উৎপাদন হয় ২৫ লাখ টন, চাহিদা রয়েছে ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। তবে সংরক্ষণ এবং তদারকিতে পচে যায় ছয়-সাত লাখ টন। এই ঘাটতির ৯৫ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

তিনি জানান, আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত পেঁয়াজের ঘাটতি চার লাখ টন এবং দেশে মজুদ আছে সাড়ে পাঁচ লাখ টন। এই মজুদ পেঁয়াজ দিয়ে আগামী তিন মাস অনায়াসে চলে যাবে। এ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, চীন, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আসছে।

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের উপপরিচালক ড. আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২৯২টি প্রতিষ্ঠান আমদানি সনদ নিয়েছে। এতে এক লাখ ৩৪ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *