৭৪৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার ৯টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

৭৪৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বুধবার (১১ আগস্ট) অর্থমন্ত্রী অ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিতপ্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২২তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৭তম সভা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৯টি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একটি প্রস্তাব ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২টি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ১টি, সেতু বিভাগের ১টি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। অনুমোদিত ৯টি প্রস্তাবের মধ্যে ৮টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৭৪৪ কোটি ৯০ লাখ ৯৮ হাজার ১০৩ টাকা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে ৬০ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

জানা গেছে, কোভিড মহামারি মোকাবিলায় জরুরি পরিস্থিতিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে চীনের সিনোফার্মসহ অন্য যেকোনো কার্যকর টিকা ক্রয়ের বিষয়টি গত ২৮ এপ্রিল সিসিইএ সভায় অনুমোদিত হয়। সিসিইএ সভার অনুমোদন এবং টিইসির সুপারিশেরে পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় দেশে ১৩ কোটি ৮২ লাখ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে আরও ৬০ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) চুক্তিপত্রে উল্লেখিত একক মূল্যে কেনা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (২০১৮ সনের সর্বশেষ সংশোধনীসহ)-এর আওতায় এলএনজি সংক্রান্ত কার্যক্রমে সহায়তার জন্য লিগ্যাল কনসালট্যান্ট নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এলএনজি আমদানি কার্যক্রমে আইনি সহায়তার জন্য জি,টমাস (টিওএম) ওয়েস্ট, জেআর এর চুক্তির মেয়াদ গত ২০১৮ সালে উত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি ভবিষ্যতে আইনি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে আনসলিসিটেড প্রস্তাব দাখিল করেন। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (২০১৮ সনের সর্বশেষ সংশোধনীসহ)-এর আওতায় তাকে ৫ বছরের জন্য সর্বমোট ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৮ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকায় নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত অপারেটরের মেয়াদ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে শেষ হবে। পরবর্তী ৫ বছর সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপারেটর নিয়োগের লক্ষ্যে ‘সিঙ্গেল স্টেজ সিঙ্গেল এনভেলপ’ পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ২টি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) কে ১৭২ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৮০৮ টাকায় ৫ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অপারেটর হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের সব শিক্ষার্থীর কাছে তাদের কাঙ্খিত পাঠ্যপুস্তক যথা সময়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (১ম ও ২য় শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯৮টি লটে ২ কোটি ৬৫ লাখ ১৭ হাজার ৮০৬টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ২৪৭টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ১৮৪টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ৯৮টি লটের বিপরীতে ২৬টি লটে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান (১) কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স (৭টি লট), (২) মা সিস্টেম কম্পিউটার্স প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজিং (৯টি লট), (৩) কৃষ্ণা ট্রেডার্স (২টি লট) এবং (৪) বারতোপা প্রিন্টার্স লিমিটেড (৮টি লট) এর কাছ থেকে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩০০ টাকায় ৭৬ লাখ ৪২ হাজার ৭১টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের গড় দাম ২৯.৯৯ টাকা।

তিনি বলেন, হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-২ এর আওতায় টার্নকি ভিত্তিতে নির্মাণকাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম ১.জেএটিআই,মালয়েশিয়া, ২.পিএসডিসি,বাংলাদেশ, ইয়নজিন, মিয়ানমার-এর কাছ থেকে ১৪৮ কোটি ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৫ টাকায় প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর জিডি-২ এর আওতায় টার্নকি ভিত্তিতে নির্মাণ কাজের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

সভায় জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন ‘৫টি র‌্যাব কমপ্লেক্স ও ১টি র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স, গাজীপুর নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-৩৭/১ এর পূর্ত কাজ সম্পাদনের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপত্র জমা পড়ে যার সবগুলি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মার্ক বিল্ডার্স লিমিটেডকে নিয়োগ প্রস্তাব করে। কমিটি এই প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দেয়নি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদনক্রমে ‘মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে বস্তিবাসিদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ১৪ তলা বিশিষ্ট ৫টি ভবনে (ভবন নং-১, ২, ৩, ৪ ও ৫) ৫৩৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট’ নির্মাণ কাজ সম্পাদনের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ১.টিসিইএল এবং ২.মল্লিক এন্টারপ্রাইজকে ৯৯ কোটি ৫৩ লাখ ৭৯৩ হাজার ৯৮৬ টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়। পূর্ত কাজ বাস্তবায়নকালে কিছু টেন্ডার/নন- টেন্ডার আইটেম হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৫ কোটি ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মুনতাজাত, কাতার থেকে ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৪৯২ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সারের মোট দাম ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ২য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অুনযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৪৫৭ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা।

রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব লিমিটেড থেকে ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের দাম ৪৮৪.৩৩৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার ৬৫০ টাকা।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *