সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমান বাস্তবতায় ব্যাংকের চেয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। কিন্তু শেয়ারবাজারে মুনাফা যেমন বেশি, তেমনি ঝুঁকিও বেশি।
মির্জ্জা আজিজ বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের আমানতের বিপরীতে যে সুদ দেয়, মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিলে সেই সুদহার হবে আসলে শূন্য। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা জমা রেখে তার বিপরীতে আমানতকারীরা প্রকৃত অর্থে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না। সেই তুলনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা বেশি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ঝুঁকি মোকাবিলা করে অধিক মুনাফা অর্জন বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু পেশাদার তহবিল ব্যবস্থাপকদের পক্ষে ঝুঁকি মোকাবিলা করে মুনাফা তুলে নেওয়া অনেক সহজ। এ ক্ষেত্রে পেশাদারদের মাধ্যমে পরিচালিত স্কিমে বিনিয়োগ করে সেখান থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়া অনেক সহজ হয়।
মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ‘ইজি ইনভেস্ট’ নামের কিস্তিভিত্তিক নতুন বিনিয়োগ স্কিমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জ্জা আজিজ এসব কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান ও সাবেক নেতারা বলেন, পুঁজিবাজারে এখন ভাবমূর্তির (ইমেজ) সংকট চলছে। ইমেজ সংকটের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন। এসব সাধারণ বিনিয়োগকারীকে আবার বাজারে ফিরিয়ে আনতে হলে নিরাপদ বিনিয়োগ পণ্য দরকার।
ডিএসইর একাধিক নেতা বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ উপকরণ। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপকদের মধ্যে পেশাদারির অভাব থাকায় সেখান থেকে আশানুরূপ ফল পাননি বিনিয়োগকারীরা। সে কারণে এখন মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই।
এই অবস্থায় আইডিএলসি মাসিক কিস্তিভিত্তিক যে বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করেছে, তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফেরাতে সহায়ক হবে। এতে যেকোনো বিনিয়োগকারী ৩, ৫ ও ১০ বছর মেয়াদে মাসিক কিস্তিভিত্তিক বিনিয়োগ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ স্কিমে মাসিক সর্বনিম্ন কিস্তি হতে হবে তিন হাজার টাকা। তবে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মাসিক কিস্তির বাইরে কেউ এককালীন অর্থ জমা করতে চাইলে সেই সুযোগও রয়েছে।
আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের মতো এ স্কিমেও যেকোনো বিনিয়োগকারী তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে পারবেন। যা মুনাফা হবে, তা ওই বিনিয়োগকারীর হিসাবে থেকে যাবে। বিনিয়োগকারী প্রতি তিন মাস পর হালনাগাদ তথ্য জানতে পারবেন। স্কিমটির মেয়াদ শেষে মুনাফা ও বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ পাবেন বিনিয়োগকারী। তবে বিনিয়োগকারীর অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ৩ শতাংশ হারে মাশুল আদায় করা হবে।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, অতীতে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আইডিএলসির নতুন এ পণ্যে বিনিয়োগ করে, যাতে বিনিয়োগকারীরা সে ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি না হন, সে জন্য তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে তার কোনো প্রতিফলন নেই।
আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে নানা ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প রয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি প্রকল্প চালু করেছে আইডিএলসি। এ প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে কোনোভাবেই তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, পুঁজিবাজারে এখন ইমেজ সংকট চলছে। এ সংকট কেটে গেলে আবারও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। এ জন্য দরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পণ্য।
ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাদের বাজারে ফিরিয়ে আনতে হলে ‘ইজি ইনভেস্ট’-এর মতো নতুন নতুন পণ্য চালু করতে হবে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এআর/সি