স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :
নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ছয়টি মৌজার (পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা এবং রতনপুর) কৃষিজমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে ‘সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি’ এবং ‘সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন’ নির্মাণ কার্যক্রমকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত শিল্পপতি মো. নুর আলীর মালিকানাধীন এই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকায় আর যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি, নদীর জলাভূমি ও নীচু ভূমি ভরাট করেছে তাদের মাটি সরিয়ে ৬ মাসের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করে তা মাটি ভরাটকারীর কাছ থেকে আদায় করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিট মামলায় এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে বেলা’র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। অপর পক্ষে মুরাদ রেজা, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, আবু তালেব প্রমুখ।
আদালত বলেছেন, ইকোনমিক জোন করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার আগে নদী রক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে।
ইউনিক প্রপার্টিজ ডেভলাপমেন্ট লি: নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা এবং রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি প্রকল্প নির্মাণ করছিল। এই নির্মাণ কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বেলা ২০১৪ সালে রিট আবেদন করে। এ আবেদনে ওইবছরের ২ মার্চ হাইকোর্ট প্রকল্প এলাকার মাটি বা বালি ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একইসঙ্গে ইতোমধ্যে ভরাটকৃত ভূমি হতে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রুল জারি করেন। এই আদেশের পর কিছু এলাকা থেকে মাটি ও বালি সরিয়ে জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে একই কম্পানি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ওই এলাকায় সরকার মাটি ভরাটের অনুমতি দিয়েছে দাবি করে আগের আদেশ অকার্যকর ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে ২০১৬ সালে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট লি:। এ আবেদনে হাইকোর্ট ওই বছরের ২৫ অক্টোবর মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন।
এ আদেশের বিরুদ্ধে বেলা আপিল করলে আপিল বিভাগ ওই বছরের ৩ নভেম্বর এক আদেশে হাইকোর্টের পূর্বের আদেশ (২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবরের আদেশ) স্থগিত করেন। এরপরও ওই এলাকায় মাটি ভরাট কাজ অব্যাহত রাখা হলে বেলা গত বছরের ১৬ জানুয়ারি আদালত অবমাননার মামলা করে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে হাজির হয়ে অঙ্গীকার করেন যে মাটি ভরাট প্রতিহত করবেন। এরপর বন্ধ হয়ে যায় মাটি ভরাট। এরপর আবারো ইউনিক প্রপার্টিজ মাটি ভরাট কাজ শুরু করলে আবারো আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। এরপরও সেখানে মাটি ভরাট অব্যাহত থাকলে বেলা ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্টে আবেদন করে। হাইকোর্ট আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দিলে তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বেলা। এ আবেদনে আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ১৪ আগষ্ট এক আদেশে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ আদেশ প্রতিপালন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। জেলা প্রশাসক ওই বছরের ৮ নভেম্বর আপিল বিভাগে হাজির হয়ে জানান, সংশ্লিস্ট এলাকায় মাটি ভরাট কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তার বক্তব্যের সমর্থনে তিনি কিছু ছবি দেখান। এ প্রেক্ষাপটে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আপিল বিভাগ বিষয়টি হাইকোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেওয়া হলো। সূত্র : কালেরকন্ঠ
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম