জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে কর্মঘণ্টা কমানোর প্রস্তাব দেবে বিপিসি

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক ;

জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয় করতে অফিস-আদালতের কর্মঘণ্টা কমানোর প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে দেশে জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কর্মঘণ্টা কমিয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত করার অভিমত তৈরি করছে সংস্থাটি। এই অভিমত প্রস্তাবনা আকারে খুব দ্রুতই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বিপিসি। এ ছাড়া ডলার সরবরাহ বাড়িয়ে নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা অব্যাহত রাখা, রেশনিং করে পরিবহনের পেছনে খরচ হওয়া জ্বালানি দ্রুত কমিয়ে আনাসহ জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে বেশ কয়েকটি অভিমত তৈরি করছে বিপিসি।

এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে অফিস টাইম কমানোসহ আমরা বিভিন্ন ধরনের অভিমত তৈরি করছি। আমাদের এই ভাবনাগুলো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী সম্প্রতি বলেন, দেশে বিদ্যুতের লোড শেডিং আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকতে পারে। দেশজুড়ে লোড শেডিং নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে চায় সরকার। সে ক্ষেত্রে অফিস-আদালতের কর্মঘণ্টা কমিয়ে ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি হোম অফিস করারও চিন্তা করা হচ্ছে।

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী আরো বলেন, ‘সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রিডে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত চাহিদা হতে পারে। সেখান থেকে কতটা কমাতে পারি সেই চিন্তা করা হচ্ছে। আমরা সাশ্রয়ী হলে হয়তো চাহিদা সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নামিয়ে আনতে পারব। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এসির ব্যবহার ২৫-এর নিচে রাখা, মসজিদে এসির ব্যবহার কমাতে হবে এবং বিয়েসহ সব অনুষ্ঠান ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে। দোকানপাটগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্ধ করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে। ’

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘জ্বালানি সংকটের কারণে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার মেগাওয়াটের মতো। আমরা যদি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারি তাহলে ঘাটতি ৫০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। ’

বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত বন্ধ রেখেছে সরকার। এলএনজির দাম না কমা পর্যন্ত দেশীয় গ্যাস থেকেই চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। গ্যাস সংকটে বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সরবরাহ কমায় চলতি মাসে লোড শেডিং শুরু হয় দেশজুড়ে। যদিও চাহিদা কমে যাওয়ায় ঈদের ছুটিতে লোড শেডিং কিছুটা কমেছে। কিন্তু চলতি সপ্তাহ থেকেই পুরোদমে কলকারখানা চালু হলে আবার লোড শেডিং শুরু হবে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুনের শেষ সপ্তাহে খোলাবাজার থেকে এলএনজি কিনতে প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) খরচ হয়েছিল প্রায় ২৫ ডলার। সেটি এখন হয়ে গেছে প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণেই সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থায় জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ গ্যাস ঘাটতি হচ্ছে, তা দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি কূপ ওয়ার্কওভার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ে অফিসের কর্মঘণ্টা কমানো যেতে পারে। তবে এ সিদ্ধান্তে আসার আগে দেখতে হবে কী পরিমাণ জ্বালানি সাশ্রয় হবে। কর্মঘণ্টা কমালে ক্ষতি কী এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের লাভ কেমন? যদি দেখা যায় লাভ হচ্ছে তাহলে এই সিদ্ধান্তে যাওয়া যেতে পারে। যেহেতু এখন গ্রীষ্মকাল চলছে তাই কর্মঘণ্টা আগানো যেতে পারে এক ঘণ্টা। তাহলে রাতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আগে আগে ঘুমিয়ে যাবে এবং রাতের কাজগুলো আগে শেষ করবে। এতেও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ’

স্টকমার্কেটবিডি.কম/ ////

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *