দালালদের দখলে প্রাইজবন্ডের পুরস্কার

prizebondস্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

দালালের দখলে চলে গেছে বেশির ভাগ প্রাইজবন্ডের পুরস্কার। চক্রটি তা কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে। আর তা চড়া দামে কিনছেন একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ। এর মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদশালীরা কালো টাকা সাদা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দালালের দখলে চলে গেছে বেশির ভাগ প্রাইজবন্ডের পুরস্কার। চক্রটি তা কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে। আর তা চড়া দামে কিনছেন একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ। এর মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদশালীরা কালো টাকা সাদা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের টানা তিনটি লটারিতে ১২টি পুরস্কারের দাবিদার সুফিয়া বেগম ও সাদিয়া আফরিন নামের দুই নারী। সম্পর্কে তারা মা-মেয়ে। ১৭ ডিসেম্বর সব পুরস্কার দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে আবেদন জমা দিয়েছেন তারা।

গত বছরের ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৯৫তম ড্র বা লটারিতে চতুর্থ পুরস্কার পাওয়া প্রাইজবন্ডের নম্বর খঝ-০৫৯০৭১৬। এই পুরস্কার দাবি করেছেন সাদিয়া। ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত ৯৬তম ড্রয়ে ৮টি পুরস্কারের দাবিদার সুফিয়া ও সাদিয়া।

মেয়ের নামে দাবি করা পাঁচটি পুরস্কারের মধ্যে একটি দ্বিতীয় (৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা), একটি তৃতীয় (১ লাখ টাকা) আর তিনটি চতুর্থ পুরস্কার (৫০ হাজার টাকা)। আর মায়ের নামে তিনটির মধ্যে একটি তৃতীয় এবং দুটি চতুর্থ পুরস্কার। তবে ৯৭তম ড্রয়ের তিনটি পুরস্কারই সুফিয়া বেগমের নামে দাবি করা, যার মধ্যে দুটি দ্বিতীয় এবং একটি তৃতীয়। এর আগেও তারা অনেক পুরস্কার নিয়েছেন।

জানা গেছে, লটারিতে জেতার পর প্রাইজবন্ডের একটি অবৈধ বেচাকেনা হচ্ছে। একটি দালাল চক্র এই বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত, বাংলাদেশ ব্যাংকে এই চক্রের সদস্যদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে।

দালালরা পুরস্কার জেতা ব্যক্তির কাছ থেকে কম দামে প্রাইজবন্ড কিনে নিয়ে দুর্নীতিবাজদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন। প্রাইজবন্ড যার কাছে থাকে, মালিকানা তারই। লটারির দুই বছরের মধ্যে যিনি পুরস্কার পাওয়া বন্ড নিয়ে হাজির হবেন, তিনিই টাকা পাবেন।

এই সুযোগ থাকায় ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে যারা অবৈধ টাকা উপার্জন করেন, তাদের একটি অংশ লটারিতে জেতা প্রাইজবন্ড কিনছেন। নিজের বা স্ত্রী-সন্তানের নামে লটারিতে পাওয়া অর্থ হিসেবে আয়কর ফাইলে দেখাচ্ছেন।

প্রাইজবন্ডের আড়ালে কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দেন দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত।

চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে। চিঠিতে বলা হয়, প্রায়ই দেখা যায় প্রাইজবন্ডের লটারিতে পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তি নিজে পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ না করে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন।

এভাবে ওই ব্যক্তি অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ পেয়ে যান। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। এ কার্যকলাপ বন্ধ করতে পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তি প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিকটস্থ ব্যাংক বা ডাকঘরে লিখিতভাবে রিপোর্ট করার বিধান করা যেতে পারে।

এই লিখিত রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকৃত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে পুরস্কারের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা নিলে অসাধু ব্যক্তির এ ধরনের কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। অবৈধ অর্থ বৈধ করার যে অভিনব প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে বলে দুদকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই অপরাধ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে। কতজনের ক্ষেত্রে এমন ঘটেছে প্রয়োজনে তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, যদি প্রাইজবন্ড বিক্রি ও পুরস্কার প্রদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা ভেবে দেখবে। সূত্র : যুগান্তর

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *