২০২১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য ৮% বৃদ্ধি পাবে: ডব্লিউটিও

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

এই সাময়িক ইতিবাচক বৃদ্ধি পরবর্তীকালে দরিদ্র দেশগুলোতে দুর্বল বাণিজ্যিক সেবা ও ভ্যাকসিন প্রদানে দেরির কারণে সংঘটিত বিভিন্ন আঞ্চলিক অসমতার কারণে বিঘ্নিত হবে।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশসডপ (ডব্লিউটিও) নতুন হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্য ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হলেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে ২০২১ সালে তা ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

তবে সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাণিজ্যের বৃদ্ধি ২০২২ সালে আবার ৪ শতাংশ কমে যাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডব্লিউটিও। এর কারণ হিসেবে ডব্লিউটিও জানায়, মহামারি পরবর্তী যেসব ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর পড়বে, তা মহামারি পূর্ববর্তী সময়ের বৃদ্ধিকে সহজেই ছুঁতে পারবে না।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই সাময়িক ইতিবাচক বৃদ্ধি পরবর্তীকালে দরিদ্র দেশগুলোতে দুর্বল বাণিজ্যিক সেবা ও ভ্যাকসিন প্রদানে দেরির কারণে সংঘটিত বিভিন্ন আঞ্চলিক অসমতার কারণে বিঘ্নিত হবে।

এছাড়াও কোভিড-১৯-এর নতুন প্রবাহ আঘাত হানার ফলে বিশ্ব বাণিজ্য আগের গতিতে ফিরে যাবার যে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, তা যেকোনো সময় নিরাশায় পর্যবসিত হতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

ডব্লিউটিও’র ডিরেক্টর জেনারেল গোজি ওকোঞ্জো-ইওয়ালা বলেন, ‘গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্ব বাণিজ্যে যে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা বিশ্বের মানুষ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর মহামারির আঘাতকে খানিকটা হলেও হালকা করেছে।’

‘এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার মুক্ত রাখা অত্যাবশ্যক এবং দ্রুত সারা বিশ্বে যথাযথভাবে ভ্যাকসিনের ব্যবহার আমাদের আগের গতি ফিরে পাবার পূর্বশর্ত,’ আরও বললেন ওকোঞ্জো।

ডব্লিউটিও জানায়, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সাময়িক পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, তা মহামারির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক খাতগুলোর নেতিবাচক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাকসিন উৎপাদনে স্বল্পতা ও অসম বণ্টন অথবা কোভিড-১৯-এর নতুন ধারাগুলো। মাঝারি থেকে লম্বা সময়ের মধ্যে জনগণের ঋণ ও ঘাটতির ফলেও বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে উচ্চমাত্রার ঋণগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুটি বিকল্প দৃশ্যপট অনুমান করা হয় সেখানে। উর্ধ্বমুখী চিত্রে দেখা যায়, ভ্যাকসিন উৎপাদন ও এর প্রসার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নানা বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হবে। ফলে বৈশ্বিক জিডিপি বৃদ্ধি পাবে আরও ১ শতাংশ এবং সেইসঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাত্রা বাড়বে আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট।

এ ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ‘২০২১ সালের শেষ তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্য তার মহামারি পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসবে। অন্যদিকে, নিম্নমুখী দৃশ্যপটে দেখা যায়, চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভ্যাকসিন উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে না, অথবা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা কম হবে। এর ফলে ২০২১ সালে বৈশ্বিক জিডিপি ১ শতাংশ কমে যেতে পারে এবং বাণিজ্যের বৃদ্ধি কমতে পারে ২ শতাংশ।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনা মহামারির কারণে লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাত্রা ১৫ শতাংশ নিচে নেমে গিয়েছিল। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে লকডাউন শিথিল করা হয় এবং শেষ তিন মাসে এসে ২০১৯ সালের কাছাকাছি পর্যায়েই পণ্য পরিবহনের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে।

মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে পণ্যদ্রব্যের বাণিজ্যের মাত্রা ওঠা-নামা করে। বেশিরভাগ অঞ্চলেই আমদানি ও রপ্তানি- উভয়ের মাত্রাই হ্রাস পেয়েছে। তবে এদিক থেকে এশিয়া ছিল একমাত্র ব্যতিক্রম, যেখানে রপ্তানি বেড়েছে ০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং আমদানি হ্রাস পেয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে আমদানি হ্রাস পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা (-৮.৮%), দক্ষিণ আমেরিকা (-৯.৩%) ও মধ্যপ্রাচ্য (-১১.৩%)। রপ্তানি কমে যাওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম ৩৫ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উত্তর আমেরিকায় এই হ্রাসের পরিমাণ তুলনামূলক কম ( -৬.১%)।

২০২১ সালে বাণিজ্যিক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনেও উত্তর আমেরিকার বড় হাত রয়েছে (১১.৪%)। এর জন্যে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বড় পরিসরে ইনজেকশন উৎপাদনকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কারণ, এর ফলে ট্রেড চ্যানেলের মধ্য দিয়ে অন্যান্য অর্থনীতিও চাঙ্গা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলে আমদানি বৃদ্ধির হার কম হলেও ইউরোপ ও আমেরিকায় এবার আমদানি বৃদ্ধি পাবে ৮ শতাংশ।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আরএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *