বন্ডের কিস্তি শোধ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

বন্ড আকারে নেওয়া সার্বভৌম ঋণের কিস্তি পরিশোধে রাশিয়ার ৬০ কোটি ডলার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে রক্ষিত রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইউক্রেইনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য মস্কোর ওপর চাপ আরও বাড়ানোর নতুন পদক্ষেপ এটা।

রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের কারণে নিজস্ব কোষাগারে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ে হাত দিতে হতে পারে মস্কোকে।

২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ সেনারা ইউক্রেইনে অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ অবরুদ্ধ করে ওয়াশিংটন।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এতোদিন ডলার-নিয়ন্ত্রিত বন্ডের কিস্তি শোধের জন্য ক্রেমলিনকে কুপন আকারে ওই তহবিল ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে আসছিল।

যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ডলার নিয়ন্ত্রিত বন্ডের কিস্তির সবচেয়ে বড় অর্থ পরিশোধের সময়সীমা ছিল সোমবার। রাশিয়ার ৫৫ কোটি ২৪ লাখ ডলারের মূল আমানত শোধ করার কথা ছিল এদিন। তবে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রুশ রিজার্ভ তারা মস্কোকে ব্যবহার করতে দেবে না।

একইসঙ্গে রাশিয়ার ২০৪২ সালে ম্যাচিউরিটির অপেক্ষায় থাকা আরেকটি বন্ডের কিস্তি হিসেবে দেওয়া কুপনের বিপরীতে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধেরও দিন নির্ধারিত ছিল সোমবার।

যুক্তরাষ্ট্রর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ মস্কোকে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ঋণ শোধের জন্য তারা হয় নিজেদের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রার মজুদ ব্যবহার করবে, নয়ত বিকল্প কোনো পথ বের করতে হবে। আর ব্যর্থ হলে খেলাপির খাতায় নাম লেখাতে হবে।

রাশিয়ার কিস্তির এই অর্থ লেনদেনের মধ্যস্তকারী ব্যাংক হিসেবে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জেপিমরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোম্পানি। তাদের এ লেনদেন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়।

নিয়ম অনুযায়ী, সময়সীমা পার হয়ে গেলে রাশিয়া ৩০ দিনের অতিরিক্ত সময় পাবে অর্থ পরিশোধের জন্য।

ইউক্রেইনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার ৬৪ হাজার কোটি ডলারের স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্ধেকই জব্দ করে রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো।

নিজেদের হাতে থাকা বাকি মজুদ খরচ করলে তা দেশের অর্থনীতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা এ সপ্তাহে তাদের বিরুদ্ধে নতুন অবরোধ আরোপ করতে যাচ্ছে।

রাশিয়া মোট ১৫টি আন্তর্জাতিক বন্ডের মাধ্যমে ৪ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ (অভিহিত মূল্য) ঋণ বিশ্ববাজার থেকে নিয়েছে। পশ্চিমা অবরোধের পরেও এখন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে খেলাপি হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে। তবে পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।

হংকংয়ের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গিবসন ডানের অবরোধ বিষয়ক আইনজীবী ডেভিড উলবার বলেন, পশ্চিমারা আসলে চেষ্টা করছে, রাশিয়া যাতে তাদের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রা যতটা সম্ভব নিঃশেষ করে ফেলতে বাধ্য হয়। এটা করা গেলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করতে পারবে না।

ইউরোপের ক্রেতাদের কাছে গ্যাসের দাম রুবলে পরিশোধের যে দাবি রাশিয়া করেছে, তার ওপরও চাপ সৃষ্টি করবে এই পদক্ষেপ।

রয়টার্স লিখেছে, এর আগে রাশিয়া শেষবারের মত যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিল কুপন আকারে ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার পরিশোধের জন্য। ওই অর্থ পরিশোধের সময়সীমা ছিল গত বৃহস্পতিবার। ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর পর এভাবে কমপক্ষে পাঁচটি লেনদেন করার সুযোগ পেয়েছে মস্কো।

রাশিয়া নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তার আন্তর্জাতিক বন্ডের আসন্ন কিস্তিগুলোর কোনো একটি পরিশোধে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা খেলাপি দেশ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *