স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আবারও ৬০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে স্পষ্ট রোডম্যাপ জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে, যেখানে উল্লেখ থাকবে তারা কীভাবে শেয়ারবাজারের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকার জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণ করবে।
ঈদুল আজহার ছুটির আগে কমিশন এই সংক্রান্ত চিঠি কোম্পানিগুলোর কাছে পাঠিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর তালিকাভুক্তি বিধি অনুযায়ী, কোনো কোম্পানিকে মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে হলে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে তা সিকিউরিটিজ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিএসইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কমিশন আগেও এসব কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু বেশিরভাগই তা মানেনি। এবার আমরা আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূলধনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হবে, সেগুলোকে এসএমই বা অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)-তে স্থানান্তর করা হতে পারে।”
তবে প্রতিটি কোম্পানির ব্যাপারে আলাদাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারা যেসব রোডম্যাপ জমা দেবে, তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে এবং কমিশন তাদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে।
তিনি জানান, কিছু বহুজাতিক কোম্পানিও এই তালিকায় রয়েছে, তবে তাদের পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকায় তারা সহজেই এই শর্ত পূরণ করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
“নিয়ম অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে আমরা কোনো স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি দেখতে চাই না, কারণ এতে বাজারের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়,” বলেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন তহবিল সংগ্রহসহ বিভিন্ন উপায় রয়েছে মূলধনের শর্ত পূরণ করার। যদি কোনো কোম্পানি নতুন তহবিল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়, তবে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“আমরা এমন কোম্পানিগুলোকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করতে পারি। আর যদি কোনো কোম্পানি এসএমই প্ল্যাটফর্মের যোগ্য না হয়, তাহলে আরও বিকল্প খুঁজে দেখা হবে,” তিনি যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, স্বল্প মূলধনের শেয়ারগুলো সাধারণত অত্যন্ত অস্থির হয় এবং কিছু অসাধু বিনিয়োগকারী এগুলোতে কারসাজি করে থাকেন।
কমিশনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র স্টক ডিভিডেন্ড ইস্যু করে মূলধনের শর্ত পূরণ করা যাবে না, কারণ এতে মূলধন বাস্তবে বাড়ে না, শুধু শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কমিশন চায় কোম্পানিগুলো বাস্তব অর্থ সংগ্রহ করুক এবং তাদের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করুক।
এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিশন ৬৪টি কোম্পানিকে মূল বোর্ডে থাকার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণে পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
সে বছর কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এসব কোম্পানির সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এবং স্বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের উপায় খুঁজতে বলা হয়।
চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়।
এই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১টির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটির নিচে, ১৫টি কোম্পানি ১০ কোটির নিচে, ২১টি কোম্পানি ২০ কোটির নিচে এবং বাকি কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটির নিচে রয়ে গেছে।
এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু ভালো পারফর্ম করছে, তবে অনেকেই লোকসানে রয়েছে এবং কিছু কোম্পানি তাদের কারখানা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তবুও কিছু কোম্পানির শেয়ারমূল্য অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে, যার পেছনে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য বা কারণ নেই—এ নিয়ে বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প মূলধনের কারণে এসব কোম্পানির শেয়ার অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়ে। কিছু বিনিয়োগকারী এতে লাভবান হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এছাড়া অনেক কোম্পানির প্রবর্তক ও পরিচালকগণ এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন এবং পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে অনাগ্রহী।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/////