
ওয়েব কোটসের লোগো
স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পাওয়া ওয়েব কোটস পিএলসির পেশ করা আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির এমন কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো—-
কিউআইও অনুমোদন পাওয়ার আগের বছর ওয়েব কোট পিএলসির সম্পত্তি, কারখানা ও মেশিনাদির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। পরের বছর ২০২৩ সালে এই মূল্য দেখানো হয়েছে ২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটি জমি, কারখানা ও মেশিনাদিবাবদ এই মূল্য বেড়েছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
উক্ত সময়ে কোম্পানিটির কারখানা ও মেশিনাদি বৃদ্ধি পেলেও তেমনটি বাড়েনি ব্যবসা। ২০২৩ সালের জুন মাসে কোম্পানিটির টার্ণওভার দেখানো হয়েছে ৪৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যা ২০২২ সালে ছিল ৪৮ কোটি ৬১ লাখ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদেরকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে উক্ত বছরে কোম্পাটির মুনাফা কমে যাওয়ায়। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির কর পরবর্তী মুনাফা এসেছে ৪ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা। যা আগের বছর ছিল ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সর্বশেষ বছরে অর্থ্যাৎ ৩০ জুন ২০২৩ সালে ওয়েব কোটস পিএলসির স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যা আগের বছর ২০২২ সালের ৩০ জুন ছিল ২২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কোম্পানির হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কেমাম্পানিটি ১৮ কোটি টাকার বেশি এই ঋণ পরিশোধ করেছে। ঋণ পরিশোধের এসব অর্থের উৎস নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধোয়াশা সৃষ্টি করেছে।
কোম্পানিটির শেয়ার মানি এক বছর আগেও ছিল মাত্র ২.৮০ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে শেয়ার মানি বেড়ে হয়েছে ২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। শেয়ারবাজারে আসার আগের বছরেই এত বড় অংকের মূলধন বাড়ানোর অনুমতি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের সম্মূখীন হয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
কোম্পানিটি কাগজে কলমে তাদের নামে ১১ কোটি টাকার রি-ভ্যালুয়েশন সারপ্লাস ও ৮ কোটি টাকা রিটেইন আর্নিং হিসাবে দেখিয়ে নিজেদের আর্থিক স্বক্ষমতাকে বাড়ানো চেষ্টা করেছে। অথচ শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটিবাবদ ২২ কোটি টাকা ছাড়া আর কোনো আর্থিক উৎস এখানে দেখানো হয় নাই। তবে প্রতিবেদন বইয়ের ১১৬ নম্বর পাতায় কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডার ইক্যুটিতে হিসাবে ৪৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। রি-ভ্যালুয়েশন সারপ্লাস ও রিটেইন আর্নিং কি তাহলে শেয়ারহোল্ডার ইক্যুটি?
শেয়ারবাজার থেকে নেওয়া অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি কারখানার জন্য অত্যাধুনিক দুটি মেশিন কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২.০৬ কোটি টাকা দিয়ে কোম্পানিটি দুটি কাষ্ট কোটিং মেশিন ১০৯২ এম এম কিনবে তারা। তবে মেশিনটির যে মূল্য দেখানো তা বিভ্রান্তিকর। এই মেশিনগুলো কোন দেশ থেকে কিনবে আর ভেন্ডার কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য প্রতিবেদনে না থাকায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তবে বিশ্বখ্যাত অনলাইন মার্কেট প্লেস আলিবাবায় এ ধরণের মেশিন ১০,০০০ থেকে ২ লাখ ডলারে বিক্রি হচ্ছে বলে প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর ভারত থেকে কিনলে এই মেশিনের দাম আরো কম পরবে।
কোম্পানিটি সর্বশেষ বছরের প্রতিবেদনে জমির মূল্য দেখিয়েছে ২৫ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কোম্পানির যুক্তি হলো, তারা দীর্ঘদিন পরে ভ্যালুয়েশন করায় জমির দাম বেড়েছে। এজন্য কোম্পানিটির সম্পত্তি, কারখানা ও মেশিনাদির রি-ভ্যালুয়েশন মূল্য আগের বছরের চেয়ে ১১ কোটি টাকা বেশি মল্যায়িত হয়েছে। কোম্পানিটি কেরানিগঞ্জের রুহিতপুরে লাকিরচের ১৭০ ডেসিমল জমি মূল্য দেখিয়েছি ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪৭ ডেসিমল জমি খালি পরে আছে। মাত্র ২৩ ডেসিমল জমিতে কারখানা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/সিআর