স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
গত কয়েক বছরে বাজারে যেসব কোম্পানির আইপিও এসেছে সেগুলোর অনেকের মৌলভিত্তি ভাল নয়। অনেক কোম্পানি জাল কাগজপত্র বিএসইসিতে জমা দিয়ে আইপিও পাশ করিয়ে নিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখী করা হচ্ছে যাতে নতুন করে কেউ এমন কাজের সাহস না দেখায়।
তিনি এ ধরনের প্রবণতা বন্ধে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ কথা বলেন।
শনিবার শেয়ারবাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় সম্পর্কিত রিসার্জেন্ট সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ এর উদ্যোগে গঠিত রিসার্জেন্ট বাংলাদেশ এই ডায়ালগের আয়োজন করে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে ব্যাংকের পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য সুবিধা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তারা আলোচনা করবেন। এছাড়াও, তারা আইসিবিকে স্বল্প সুদের তহবিল সুবিধা দেওয়ার জন্যেও অনুরোধ জানাবেন, যাতে তারা পুঁজিবাজারে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
সংলাপ সঞ্চালনা করেন এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ।
আলোচনায় অংশ নেন বিল্ড চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান, ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) এর প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমূখ।
সংলাপে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, তারা শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অটোমেশনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। অটোমেশন হয়ে গেলে ব্যবসা সহজ হবে, স্টেকহোল্ডারদের সময় ও খরচ বাঁচবে। বাজারে আরও স্বচ্ছতা এবং সুশাসন আসবে। বাজারের পরিধি প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে দুই বছর পর একটি গতিশীল বাজার দেখা যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রতিটি ব্যাংককে স্বল্প সুদ হারে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের যে সুযোগ দিয়েছে তাতে অগ্রগতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৩টি ব্যাংক ওই তহবিলের প্রস্তাব তাদের পরিচালনা পর্ষদে পাশ করিয়ে নিয়েছে। কারা কত টাকা বিনিয়োগ করেছে বিএসইসিতে সে রিপোর্টও পাঠাচ্ছে তারা।
বাজারে লেনদেন বাড়াতে সিএসইর চেয়ারম্যান স্ক্রিপ নেটিং এর সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। বহুল আলোচিত বাইব্যাক পদ্ধতি চালুর জন্য কোম্পানি আইনে সংশোধনের সময় বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই বাজারের উন্নয়ন হলে কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের জন্য আর ব্যাংকের উপর এতটা নির্ভর করতে হবে না। ব্যাংকের উপর থেকে চাপ কমবে। স্বল্প মেয়াদের আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদের অর্থায়নজনিত সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।
শেয়ারবাজারের বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন না বলে অভিযোগ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী এখানে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করেন। এটি ভাল। তাদেরকে উৎসাহিত করতে চাই। কিন্তু কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারী স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করে কারসাজির মাধ্যমে বেশি মুনাফা করার চেষ্টা করে। তারা কয়েকটি একাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে সেগুলো থেকে একসঙ্গে শেয়ার কিনে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা বিদেশে নিয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনায় আমরা ব্যবস্থা নেব।
স্বাগত বক্তব্যে সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম শেয়ারবাজারকে আরো উজ্জীবিত করতে করপোরেট গভর্ন্যান্স ভালো এবং অতীতে ভাল লভ্যাংশ দিয়েছে এমন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার আহ্বান জানান। এসএমই কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারের প্রতি আগ্রহী করতে তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরে শূন্য শতাংশ এবং পরবর্তীতে ১৫ শতাংশ করপোরেট কর আরোপের প্রস্তাব করেন।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ